সুব্রত মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস আমল থেকে তৃণমূল আমল পর্যন্ত বিস্তৃত যাঁর কেরিয়ার। আজ, বৃহস্পতিবার সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উন্মোচন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উন্মোচন করতে এসে মূর্তি যে তাঁর পছন্দ হয়নি তা-ও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অবয়ব পছন্দ হয়নি মুখ্য়মন্ত্রীর। মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে তিনি ‘সুব্রতদা’র অবয়বের মুখটা বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে মূর্তি উদ্বোধনে গিয়ে কার্যত গলা ধরে আসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আবেগরুদ্ধ গলায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অভিভাবক হারিয়েছি।’ তাঁর জন্য একবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জেলে যেতে হয়েছিল, সেই কথাও বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বর্ষীয়ান এই বঙ্গ নেতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন এক সময় ছিল আমি প্রতিদিন সকাল ৯টা হলে সুব্রতদার বাড়িতে যেতাম। যে কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতেন তিনি। বউদি জানেন একবার আমার জন্য তাঁকে গ্রেফতারও হতে হয়েছিল।’ সেই স্মৃতিচারণা করে মমতা বলেন, ‘একবার বাম আমলে বনধ ডেকেছিলেন সুব্রতদা। সেই সময় একটি সংবাদমাধ্যম আগে থেকেই লিখে দিয়েছিল বনধ নাকি হবে না। আমি কয়েকজনকে নিয়ে সেই মিছিলে যায়। যথারীতি ৪-৫ জন থেকে সেটা ৪০০-৫০০ জন হয়। আমি চলে এলাম মিছিল শেষ। এরপর পুলিশ সুব্রতদাকে গ্রেফতার করে। সুব্রতদা বললেন তোর জন্য গ্রেফতার হলাম। আমি বললাম বনধ যে ব্যর্থ নয়, তা যে প্রমাণ করে দিলেন! এই কথা শুনে সুব্রতদা বলেছিল, ঠিক বলেছিস।’ পুজোর স্মৃতির স্মরণী বেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুজোয় গেলেই আমাকে বলত চণ্ডীপাঠটা করতে হবে। এখানকার পুজোর থিমটা একটা ট্র্যাডিশনাল থিমে পরিণত করেছিল। পুজোর সময় চারদিন বসে আড্ডা দিত। ওই স্মৃতিগুলো আমাকে যন্ত্রণা দেয়। শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল সেই ছবিটাও ফোন রয়েছে। কিছুতেই সুব্রতদার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারিনি। একজন কর্মঠ মানুষ, তাঁর চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারি না। কোথাও বাইরে গেলেই আমার জন্য উপহার আনতেন। একবার একটা ব্যাগ দিয়েছিলেন, একবার একটা সানগ্লাস এনে দিয়েছিল।’ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর বেদনাদায়ক দিনের কথা বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘কালীপুজোয় অমাবস্যার রাতে সুব্রতার মৃত্যুর খবরে আমাদের জীবনে অমাবস্যা নিয়ে এল। তাঁকে হারিয়ে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছে। সুব্রতদার নেতৃত্বেই আমি রাজনীতি শুরু করি। কী করে কী হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। একটা দমকা হাওয়া আমাদের প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নিলেন।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন- ”’এভারগ্রিন’ ক্লাব যতদিন থাকবে, ততদিন সুব্রতদা বেঁচে থাকবেন। আমার অভিভাবক ছিলেন সুব্রতদা। তাঁর হাত ধরে ছাত্র রাজনীতি করেছি। হকার উচ্ছেদের সময় আমার জন্য একবার গ্রেফতার হতে হয় সুব্রতদাকে। বনধ ডেকেছিলেন, আমি বললাম, চলুন মিছিল করব।”