নয়াদিল্লিঃ নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ । এর জেরে ৮০ কোটি মানুষ আরও পাঁচমাস খাদ্যশস্য পাবে । আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি বলেন, “আমাদের এখানে বৃষ্টির সময় ও পরে কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ হয় । পাশাপাশি জুলাই থেকে ধীরে ধীরে উৎসব-পার্বন শুরু হয়। রাখি বন্ধন, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপুজো, ছটপুজো, দীপাবলি একের পর এক উৎসব চলতে থাকে। এইসময় প্রয়োজনের পাশাপাশি খরচও বাড়ে। আর একথা মাথায় রেখেই সরকারের তরফে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এবার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হল। অর্থাৎ ৮০ কোটির বেশি পরিবারকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার এই যোজনার মেয়াদ আরও পাঁচমাস বাড়ল। এই ৫ মাস পরিবার প্রতি সদস্যের ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে । এর সঙ্গে একমাস অন্তর ডালশস্য দেওয়া হবে । নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, এই যোজনার খাতে ৯০ হাজার কোটির বেশি টাকা খরচ হয়েছে । বিগত তিন মাসের হিসেব জুড়লে যা গিয়ে দাঁড়ায় দেড় লাখ কোটি টাকা । গরিবদের এই বিনামূল্যে খাদ্য দেওয়ার যোজনার জন্য কৃষক ও আয়কর দাতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি । বলেন, “আজ গরিবদের সরকার যদি এই বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে পারছে, তার কৃতিত্ব কৃষক ও আয়কর দাতাদের । তাঁদের পরিশ্রমেই দেশ এই সাহায্য করতে সক্ষম হয়েছে ।” লকডাউনে দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লকডাউনের সবার আগে যে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হল কোনও গরিব যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার , নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান সবাই একযোগে চেষ্টা করেছে । এইজন্য লকডাউন শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা নিয়ে এসেছে । যাতে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের কথা ঘোষণা করা হয় । গত ৩ মাসে ২০ কোটি গরিব পরিবারের জনধন যোজনায় সরাসরি ৩১ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে । পাশাপাশি ৯ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে । গ্রামে গ্রামে শ্রমিকদের রোজগার দেওয়ার জন্যও ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার ।” কোরোনা পরিস্থিতিতে এক বড় কাজ করে দেখিয়েছে ভারত । আজ এমনই জানান প্রধানমন্ত্রী । বলেন, “করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি ভারতের ৮০ কোটির বেশি পরিবারের প্রতি সদস্যকে তিনমাস পর্যন্ত পাঁচ কেজি গম বা চাল এবং প্রতি মাসে 1 কেজি করে ডাল দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে । যা অ্যামেরিকার মোট জনসংখ্যার আড়াই গুণ ।” এর পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়েনের দেশগুলির জনসংখ্য়ার তুলনাও টানেন তিনি । লকডাউন যে কার্যকর হয়েছে, আজ আরও একবার সেকথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি । বলেন, “করোনায় মৃত্যুর হারকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । সময়ে লকডাউন জারি হওয়ায় ভারতে লাখ লাখ মানুষের জীবন বেঁচেছে । ” আনলক ১.০-তে অনিয়ম বাড়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে । তিনি বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে আমরা আনলকে ২.০-তে প্রবেশ করছি । পাশাপাশি এমন ঋতুতে প্রবেশ করছি, যখন সর্দি-কাশি জ্বর এসবের প্রবণতা বেড়ে যায় । এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন, নিজের খেয়াল রাখুন । লকডাউনে নিয়ম পালন করা হলেও, আনলক ১.০-র পর থেকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনিয়ম বাড়ছে । প্রথমে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব নিয়ে সতর্ক ছিলাম আমরা । কিন্তু আজ যখন বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তখন এই অনিয়ম চিন্তার কারণ । এখন সরকার, স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। কনটেইনমেন্ট জোনে গুরুত্ব দিতে হবে । যাঁরা নিয়ম মানছেন না, তাঁদের আটকাতে হবে । বোঝাতে হবে । সতর্ক করতে হবে । মনে রাখতে হবে কোরোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ ১৩০ কোটির মানুষের প্রাণ বাঁচানোর অভিযান । ভারতে গ্রামের প্রধান হোক বা দেশের প্রধানমন্ত্রী কোউ নিয়মের উর্ধ্বে নন ।”