মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ নিয়ে ভারত অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি তৎপর। করোনা বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে কোভিডের টিকাকরণ সকল কিছুতেই নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আরও একবার করোনার ঢেউ যাতে দেশে আছড়ে না পড়ে তাঁর জন্যে সম্ভাব্য সমস্ত কিছুই তত্ত্বাবধানে রেখা হয়েছে। করোনার ঝুঁকি কমলেও কোভিড পরবর্তী অসুস্থতার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কলকাতা থেকে শুরু করে রাজ্যের আনাচেকানাচে নিত্যদিন এমন সব রোগীর সন্ধান মিলছে শয়ে শয়ে যাদের শরীরে কোভিডের থাবা সরে যাওয়ার পরেও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গিয়েছে। বিশেষত, হার্ট, ফুসফুস, ব্রেন, তক এবং মাংসপেশীতে। শুধু তাই নয়, এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে রাজ্যজুড়েই অকালেই ঝরে যাচ্ছে বহু প্রাণ। কেউ হার্ট-অ্যাটাক-এ, আবার কেউ ব্রেন স্ট্রোক-এ। সেই সঙ্গে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি, শ্বাসযন্ত্রের ওপর ও নীচের অংশে সংক্রমণ, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়ার প্রকোপ। বেড়েছে অ্যালার্জি, হাঁপানির রোগীদের ভোগান্তিও। Muscle Pain সমস্যাও কাবু করছে অনেককে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এইসবই ব্রেন স্ট্রোক। কোভিডের বিষময় ফল। দেশ-বিদেশের চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান ও আশঙ্কা, কোভিড চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে প্রত্যেকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। সেই কারণে বিশেষ করে হার্ট এবং ফুসফুসের অসুখ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছে বাংলা ও দেশজুড়ে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে এত চিকেন পক্সে মৃত্যু, ছোটবেলার পুরনো অসুখবিসুখগুলি এত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা-সবটাই পোস্ট কোভিড সিনড্রোম-এর ফল। কীভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তার রাস্তা এখন খুঁজছেন তাঁরা। রাজ্যের নানা ল্যাবরেটরিতে সর্দি-কাশির কাতারে কাতারে নমুনা আসছে পরীক্ষার জন্য। তাতে কোনও না কোনও ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলছে। এমনকি H3N2 বা সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাবও চোখে পড়ছে রাজ্যজুড়ে। পাশাপাশি, রাইনো, অ্যাডেনো সহ প্রচুর ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। আগে যেখানে পরীক্ষা করাতে আসা প্রতি ১০টি নমুনার মধ্যে ১-২টিতে কোনও না কোনও ভাইরাস মিলত, এখন সেখানে ৮-৯টি নমুনাতেই ভাইরাস মিলছে। ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত ২-৩টি ভাইরাসে একইসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের এটাও দাবি যে, রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে জ্বর-সর্দি-কাশি-গলা ব্যথার সমস্যা নিয়ে এখন নিত্যদিন মিছিল লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। প্রাণঘাতী হার্টের অসুখ ও হার্ট অ্যাটাক বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হার্ট-অ্যাটাক ও ব্রেন-স্ট্রোক বেড়ে গিয়েছে বহুলাংশে। এসবের সঙ্গে কোভিডের যোগ কতটা তা একাংশের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। কিন্তু আশেপাশে যা কিছু অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে, তার সঙ্গে কোভিডের যে কোথাও না কোথাও যোগসূত্র আছে সেটা তাঁরা নিশ্চিত।