সনাতন হিন্দু ধর্মে তুলসী পুজোকে অত্যন্ত পবিত্র ও শুভ বলে মনে করা হয়। তাই তুলসী গাছকে পুজোও করা হয়। প্রতিদিন পূজিতা হন দেবী তুলসী। আবার কেউ কেউ বৃহস্পতিবার করে তুলসী (TULSI) পুজো করেন। তুলসী (BASIL) মঞ্চে সন্ধ্যা প্রদীপ, জ্বল দিয়ে শাঁখ বাজানো হয়। মনে করা হয় তুলসী জন্মগ্রহণ করেছিলেন বৃন্দা রূপে। তিনি মা রূপে আরাধ্যা। বিশ্বাস, দেবী তুলসী আসলে দেবী লক্ষ্মী। এছাড়া ওষধি গুণের কথাও সকলের জানা। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে পালন করা হয় ‘তুলসী বিবাহ’। প্রসঙ্গত, একাধিক জায়গায় ৫ দিন ধরে পালিত হয় তুলসী বিবাহ। বিষ্ণু দেব (শালগ্রাম শিলা)-এর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তুলসী দেবীর (লক্ষ্মী)র। উল্লেখ্য, দেবতা বিষ্ণু দীর্ঘ ৪ মাস পরে জেগে উঠলে শুরু হয় বিবাহ পর্ব। প্রসঙ্গত, নভেম্বরে পালিত হয় ‘তুলসী বিবাহ’। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, রাক্ষস বংশের কন্যা বৃন্দা ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। তাঁর বিয়ে হয়েছিল জলন্ধর (শঙ্খচূড়) রাক্ষসের সঙ্গে। স্বামী যুদ্ধে গেলে তিনি ঈশ্বর আরাধনা করতেন। জলন্ধরকে পরাস্ত করতে সমস্ত দেবতারা দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিষ্ণুর। এরপরে বিষ্ণুদেব জলন্ধরের রূপ ধারণ করে নষ্ট করেন বৃন্দার পতিব্রত ধর্ম। এরপর ত্রাতা হিসেবে পরম ব্রহ্ম তথা জগৎ পিতা মহাদেব জলন্ধরকে পরাস্ত করতে যুদ্ধ শুরু করেন। সেই যুদ্ধেই মৃত্যু হয়েছিল জলন্ধরের। সমস্ত ছল জানার পরে বিষ্ণুকে অভিশাপ দিয়েছিলেন বৃন্দা। তখনই নারায়ণ শিলা বা শালগ্রাম শিলায় পরিণত হয়েছিলেন বিষ্ণু। দেবী লক্ষ্মী বৃন্দার শরণাপন্ন হলে বৃন্দা সেই শাপ প্রত্যাহার করেন। তবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বৃন্দা। তাঁর চিতাভস্ম থেকে জন্ম নেয় একটি চারা- ‘তুলসী’। এরপর বিষ্ণু নিজের একটি রূপকে পাথরে (শালগ্রাম শিলা) পরিণত করেন। তুলসী ছাড়া তাই বিষ্ণু প্রসাদ অসমাপ্ত। ভগবান বিষ্ণুরই অন্য অবতার কৃষ্ণ- রাম। তাই তাঁদের প্রসাদেও থাকে তুলসী। সেই সঙ্গে থাকে চন্দন। তুলসী কিন্তু একটি ঘোরতর অন্যায়ও করেছিলেন। রামের অনুপস্থিতিতে সীতা তাঁর শ্বশুর দশরথের পিণ্ডদান করেছিলেন বালি দিয়ে। সাক্ষী ছিল ফল্গু নদী, ব্রাহ্মণ, তুলসী এবং বটগাছ। রাম এলে বটগাছ ছাড়া সকলেই মিথ্যাচার করে। তখন ৩ জনকেই অভিশাপ দিয়েছিলেন সীতা। অভিশাপ ছিল, তুলসীর শরীরে কুকুর এবং শেয়ালে প্রস্রাব করবে। যোগ বেদান্ত সেবা সমতি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ২৫ ডিসেম্বর পালন করে ‘তুলসী পূজণ দিবস’। এই দিন নতুন তুলসী গাছ রোপণ করে পুজো করা হয়।
তুলসী পুজোর নিয়ম
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে শুদ্ধ হওয়া খুবই জরুরি। তুলসী গাছকে জল নিবেদন করা হয় এরপর।
সিঁদুর ও তেল দিয়ে কপালে তিলক আঁকতে পারেন।
এরপর তুলসী মঞ্চের সামনে বা গাছের নীচের ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো উচিত।
ফল এবং মিষ্টি নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখুন। বিশেষ করে বাতাসা ও মিষ্টি রাখতে পারেন।
তুলসী স্তোত্র পাঠ করুন। অথবা, ‘ॐ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়’ মন্ত্রটি ১১বার জপ করুন।
সবশেষে আরতির মাধ্যমে তুলসী পুজো শেষ করুন। এছাড়া তুলসী বীজের মালা পরতে পারেন। তাতে শুভ ফল পেতে পারেন।
তুলসী পুজোর গুরুত্ব
তুলসী পূজা দিবসের অনেক ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। এটি দেবী তুলসী পুজোর একটি পবিত্র দিন। এ দিনে, অনেকেই পুজো করার আগে নতুন তুলসী গাছ লাগাতে পারেন। আবার কেউ কেউ নিজের বাড়িতে স্থাপন করা গাছের পুজো করতে পারেন। এছাড়া তুলসী পুজো করা হলে পরিবারে ধন, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে নিয়ে আসে। হিন্দুধর্মে তুলসীকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। তাই অনেকেই তুলসীকে হরি প্রিয়াও বলে থাকেন। তাই এদিন তুলসী পুজো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।