ক্রাইম

‘প্রবীণদের যৌনসুখ দিতে বাধ্য করা হতো, ৫০ বার ধর্ষিতা হয়েছি’, ভারতের ওশোর আশ্রমের ডেরার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শোনালেন ব্রিটিশ প্রৌঢ়া

ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু শ্রী রজনীশ ওরফে ওশোর ডেরায় ছেলেবেলায় অবাধ এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌনতার শিকার হয়েছিলেন এক ব্রিটিশ প্রৌঢ়া। ৫৪ বছর বয়সে এসে সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন তিনি। জনসমক্ষে আনলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আস্তানার ‘কুকীর্তিগুলি’। ব্রিটিশ ওই প্রৌঢ়া ‘দ্য টাইমস’-কে একটি ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়ার নাম করে অবাধ যৌনতায় লিপ্ত হতে বাধ্য করা হতো সেই আশ্রমে। ওশোর আশ্রমে ব্রিটিশ এই প্রৌঢ়ার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রেম সরগম’। অভিযোগ, মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে যৌন হেনস্থা হয় ওই আশ্রমে। তিনি বলেন, ‘ওশোর তিনটি সন্ন্যাস কমিউনিটির আশ্রমে বেড়ে উঠেছি আমি। নিষ্পাপ শিশু ছিলাম আর সেই সুযোগে দিনের পর দিন আমাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। আধ্যাত্মিক পাঠ পড়ানোর নামে চলত উদ্দাম যৌনতা।’ দুঃস্বপ্নের সেই রাতগুলি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রেম সরগম বলেন, ‘ছয় বছর বয়সে আমায় নিয়ে ব্রিটেন থেকে পুনেতে এসেছিলেন বাবা। তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। আমাকে আর বাবাকে আশ্রমেই রেখে দিয়েছিলেন।’ কী ভাবে তাঁর নাম বদল করা হয়, গেরুয়া বসন পরতে বাধ্য করা হয় তা ব্যাখ্যা করেন প্রেম সরগম। তিনি জানান, আশ্রমে তাঁকে বোঝানো হয়েছিল, বাবা-মায়ের যৌন জীবনে বাধা হয় শিশুরা। প্রেম সরগমের কথায়, ‘ওশো বিশ্বাস করেন শিশুদের নিয়মিত যৌনতা চাক্ষুস করা উচিত। এবং বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছলে যুবকদের দ্বারা যৌন সুখ পাওয়া উচিত কিশোরীদের। পিডোফিলিয়া অর্থাৎ প্রবীণদের মাধ্যমে শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহকেও সেই আশ্রমে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে ধরা হতো।’ মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন প্রেম সরগম। তার আগে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত নানাভাবে প্রবীণদের যৌনসুখ দিতে বাধ্য করা হতো তাঁকে। বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর নামে মেদিনা আশ্রমেও যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রেম সরগম। ১২ বছর বয়স হওয়ার পর তাঁকে পাঠানো হয়েছিল আমেরিকার ওরেগাঁওতে ওশোর অপর একটি আশ্রমে। ততদিনে প্রায় ৫০ বার তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। প্রেম সরগমের কথায়, ‘১৬ বছর বয়সে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি আমার সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’

রজনীশ কাল্ট বা ওশো কাল্ট স্থাপন করা হয় ১৯৭০ সালে। আধ্যাত্মিকতাবাদে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশ থেকে যারা ভারতে আসতেন, তাঁদের জন্যই এই আশ্রম তৈরি করেছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু। পুনেতে প্রথম আশ্রমটি নির্মাণ করার আগে দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন এই রজনীশ ওরফে ওশো। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন বিষয়গুলির ক্ষেত্রে বরাবরই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। ১৪ বছর বয়স থেকেই ‘পার্টনার সোয়্যাপিং’ অর্থাৎ সঙ্গী আদল-বদল করার পন্থায় বিশ্বাস রাখেন এই ওশো। অবাধ যৌনাচারে বিশ্বাসী এই ধর্মগুরুকে ভারতে ‘সেক্স গুরু’ তকমা দেওয়া হয়েছে। ৯৩টি বিলাসবহুল রোলস রয়েস গাড়ি রয়েছে তাঁর গ্যারাজে। সে কারণে আমেরিকায় ওশোকে ‘রোলস রয়েস গুরু’ নাম দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মুক্তি পেতে চলেছে ‘চিলড্রেন অফ দ্য কাল্ট’ নামে একটি তথ্যচিত্র। যেখানে প্রেম সরগমের জীবন কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। কী ভাবে ওশোর সেই আশ্রম থেকে ব্রিটিশ প্রৌঢ়া পালিয়ে বেঁচেছিলেন, সেই কাহিনিই দেখা হবে তথ্যচিত্রে। প্রেম সরগম বলেন, ‘আমি চাই গোটা বিশ্বের মানুষ জানুক আমার মতো হাজার হাজার নাবালিকার সঙ্গে ওশোর আশ্রমে কী কী হয়েছে।’