কলকাতা

‘আমরা এত বড় অভ্যর্থনা আশা করিনি’, আপ্লুত ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা

বাংলার দুর্গাপুজোয় ইউনেস্কোর হেরিটেজ মুকুটের জেরে কলকাতার উন্মাদনায় অভিভূত ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ।  সরকারিভাবে UNESCO-কে ধন্যবাদজ্ঞাপনে কলকাতায় বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভাযাত্রার শেষে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রেড রোডে। রেড রোডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সম্মানিত করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা পৃথিবী একটাই দেশ এ রকমই বার্তা দিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। মানবতা, সংহতি আমাদের সম্পদ,মঞ্চে বলেন মমতা। পাশাপাশি এদিন দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইউনেস্কো প্রতিনিধি ছাড়া সকলকে উঠে দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেওয়ার অনুরোধ করেন মমতা। ইউনেস্কোর তরফ থেকে তাঁদের দুই প্রতিনিধি এরিক ফল্ট (Eric Falt) এবং টিম কার্টিস (Tim Curtis) অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পাশে নিয়েই এদিন তাঁদের বরণ এবং সম্মাননা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে হাতে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা। মা দুর্গার স্মারক তুলে দেওয়া হয় তাঁদের হাতে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কলকাতার দুর্গা পুজোকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান হয় এরিক ফল্ট এবং টিম কার্টিসকে (Tim Curtis)। তাঁদের হাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিছু বই তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বইও দেওয়া হয় তাঁদের। বাংলার শিল্প সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে এইরকম নানা ধরণের উপহার স্মৃতি হিসেবে দেওয়া হয় তাঁদের। মঞ্চে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে টিম কার্টিস বলেন এই অভূতপূর্ব আয়োজন সত্যিই অবিশ্বাস্য। তিনি বাংলার পুজোকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি পুজো আয়োজক থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি প্রান্তের পুজোর সঙ্গে যারা পরিবারের মতো মিশে আছেন সেইসব পুরোহিত, শিল্পী, ঢাকবাদক প্রত্যেককে ধন্যবাদ দেন তিনি।  বাংলার সংস্কৃতিকে এভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে ইউনেস্কোর প্রশংসা

পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমরা এত বড় অভ্যর্থনা আশা করিনি । টিম কার্টার চড়ান্ত রিপোর্ট পাঠাবেন । তবে আমরা যত দেখছি অবাক হচ্ছি ।’’ দুর্গাপুজো নিয়ে আজকের সাজ মূলত ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানানোর জন্যই । বর্ণাঢ্য মিছিলে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পা মিলিয়ে ছিলেন হাজার হাজার মানুষ । শুধু এই দিনের মিছিল মিছিল ছিল না, তা ছিল বর্ণময় রামধনুর ছটা । এদিন সেসব দেখে কার্যত অবাকই হয়েছেন টিম কার্টার এবং এরিক ফাল্ট । আর সে কথাই নিজের বক্তব্য রাখার সময় দু’জনেই বলেছেন । এদিন এরিক ফাল্ট বলেন, ‘‘কী দৃশ্য দেখলাম । তিন মাস আগে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল । তিনি বলেছিলেন ইউনেস্কোকে বাংলার মানুষ ধন্যবাদ জানাতে চান । কিন্তু আজকে বলতেই হচ্ছে আমরা এত বড় কিছু হবে আশা করতেই পারিনি । আমরাও আমাদের সংস্থা এবং গোটা টিমের তরফ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি । এই উষ্ণ অভ্যর্থনা দীর্ঘদিন মনে থাকবে ।’’তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সদর দফতর প্যারিসে গোটা অনুষ্ঠানের একটা রিপোর্ট পাঠাব । আমি আশা করছি আগামিদিনে বহু প্রতিনিধি দুর্গাপুজোর এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহী হবেন ।’’ফাল্টের কথা অনুসারে, ‘‘দুর্গাপুজো একটা উৎসবের পাশাপাশি, এখানে মানুষের জীবন জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে । এর অর্থনৈতিক দিকটাও অবশ্যই ভাববার । একই সঙ্গে এই উৎসব বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মানুষ উদযাপন করে । এই ভিন্নতা অবশ্যই উপভোগ্য, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং । বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা থেকে উঠে আসা মানুষ এই পুজোকে উদযাপন করেন তাঁদের মতো করে । সত্যি কথা বলতে আজকে স্বীকার করে নিতেই হয়, এইরকম প্রাণচঞ্চল উৎসব আমি অতীতে দেখিনি ।’’ তিনি বলেন, ‘‘আর মাত্র তিন সপ্তাহ আছে দুর্গাপুজোর প্রাক প্রস্তুতির জন্য । আমি রীতিমতো উত্তেজিত পুজো আসার আগে প্রস্তুতি যদি এরকম হয়, পুজো আগামিদিনে কী হতে চলেছে । আজকে একথা স্পষ্ট ভাবে বলে যেতে চাই, এই বছর পুজোয় আমাকে অবশ্যই দুর্গাপূজা সেলিব্রেট করার জন্য আসতে হবে । আবার আপনাদের সঙ্গে দুর্গাপুজোয় দেখা হবেই ।’’