সম্পাদকীয়

করোনা-কমিশন টানাপোড়েনে ভোট মিটল আট দফাতেই

নিবেদিতা শেঠ

প্রায় অন্তিম লগ্নে বঙ্গের ভোট উৎসব। বাকি রইল উৎসবের শেষটুকু যার দিকে তাকিয়ে গোটা রাজনৈতিক মহল। শুধু এরাজ্যই নয় বাংলার ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশও। কারণ যত রঙ্গ তো বঙ্গেই। ভোট তো হল আরও চার রাজ্যেও। কিন্তু শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। আট দফায় টানা এক মাস ধরে চলল গণতন্ত্রের সবথেকে বড় উৎসব। রীতিমতো সাড়া ফেলে দিল বৈকি। বাংলার ভোটে হিংসা, অশান্তি রুখতে শ’য়ে শ’য়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হল। কিন্তু আট দফার একটিতেও শান্তিপূর্ণ ভোট হল না। রাজ্য পুলিশের ভরসায় না থেকে কমিশন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলায় আনল। তাতে ভোটগ্রহণ পর্ব বিশাল সন্তোষজনকভাবে মিটল কি? প্রশ্ন তো আজ তুলতেই হচ্ছে।
এবারের ভোটের ব্যাটলগ্রাউন্ড নন্দীগ্রামকে ম্লান করে দিল শীতলকুচির নিন্দনীয় ঘটনা। ভোটের বলিও হল ৫ জন। মারামারি, বোমাবাজি, গুলি চালানোর পাশাপাশি একাধিক প্রার্থীদের উপর হামলা, তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর, ভোটদানে প্রভাবিত করার নানান অভিযোগ, বুথ এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ, বাড়ি গিয়ে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হুমকি, বাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ- কোনটা বাদ রইল? কোন বিষয়টা আটকানো গেল? প্রশ্ন তো উঠছেই আজ করোনার ভয়ঙ্কর আবহে। কারণ শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলার এই অতিমারী পরিস্থিতিতে বহুবার অনুরোধ আসা সত্ত্বেও ভোটগ্রহণ পর্ব ক্লাব করতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন । যদিও গেরুয়া শিবিরের মতে, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লির মতো জায়গায় তো ভোট নেই। তবে সেখানে কী করে বাড়ল করোনা। তাই বাংলাতে এটা কোনও কারণই হতে পারে না। চিকিৎসকরাও যেখানে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন দেশের জনপ্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া সেখানে এই রকম! চোখে আঙুল দিয়ে একটা পরিসংখ্যান না দেখালেই নয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি,২০২১ রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত ১৯০। ২৮ মার্চ,২০২১ দৈনিক আক্রান্ত ৮২৭। আর ২৮ এপ্রিল, ২০২১ এ সংখ্যাটা ১৭,২০৭। কীভাবে হল প্রশ্ন তো থাকছেই। আর সর্বোপরি শ্রদ্ধার বদলে ধিক্কার নির্বাচন কমিশনকে। ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে গেল না তো! কী হল আখেড়ে? ভোটে অশান্তিও রোখা গেল না, উল্টে করোনার সুনামিতে আজ ত্রস্ত বঙ্গ। এহেন করোনা পরিস্থিতিতেও কমিশনকে সাথে নিয়ে আট দফাতেই শেষ হল ভোটের লড়াই। কমল না একটিও। এখন চিকিৎসকদের সাথে নিয়ে আমরাই করি বাঁচার লড়াই। শুধু আর্জি একটাই, পরিবর্তন বা প্রত্যাবর্তন যাই হোক না কেন,দেখো, পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন, অক্সিজেন, রেমডিসিভারটা যেন মজুত থাকে হাসপাতালে।