আমাদের দেশের জাতীয় পতাকার জন্মদিন হল ২২শে জুলাই। জাতীয় পতাকার কেন্দ্রে ২৪টি দণ্ডযুক্ত নীল ‘অশোকচক্র’ সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। এ পতাকার কেন্দ্রে রয়েছে অশোকচক্র, যা সম্রাট অশোক নির্মিত সিংহ শীর্ষযুক্ত অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া। সম্রাট অশোক হিন্দু-মুসলিম সবার নিকটই শ্রদ্ধেয় হওয়ায় এ অশোকচক্রও গৃহীত হয় সবার নিকট। স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই বিশেষভাবে গঠিত গণপরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে হতে হবে। ভারতের পতাকা দুটি স্থানে উত্তোলনের খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতায় এবং অন্যটি জার্মানিতে। ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার পার্সিবাগান স্কোয়ারে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী এক সভায় প্রথম ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলিত হয়। অন্যদিকে ১৯০৭ সালের ২২ জুলাই জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে ভিখাজি কামা অন্য একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন। “ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা বানিয়েছিলেন একজন মুসলীম নারী, আইসিএস বদরুদ্দীন তায়েবজী’র স্ত্রী সুরাইয়া। তাঁর নকশা পন্ডিত নেহেরুর ভালো লাগায় তিনি নিজের গাড়ীর বনেটে তা লাগিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেটাই ভারতের জাতীয় পতাকার মর্যাদা পায়। এই নারী অহিংস স্বাধীনতা আন্দোলনেও অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিলেন, কিন্তু হিন্দুপ্রধান ভারতে তিনি বিস্মৃতির অতলে চলে গিয়েছেন। একে নারী, তায় আবার মুসলীম- হিন্দু ভারতে এটাই তো তার ভবিতব্য ছিলো। যেদেশে যাবতীয় পুরস্কার ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের নাম কেবলমাত্র হিন্দু ঐতিহ্য থেকে তুলে আনা হয়, সেখানে সুরাইয়াদের ভাগ্যে এরচেয়ে ভালো আর কি থাকতে পারে?” এছাড়া ইংলিশ ইতিহাসবিদ ট্রেভোর রয়েলের বইতে এমনটিই বলা হয়েছে। তার দাবি, ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা বানিয়েছিলেন দেশটির সিভিল সার্ভিস অফিসার বদরুদ্দীন তায়েবজী’র স্ত্রী সুরাইয়া তায়েবজী। ট্রেভোরের দাবি, সুরাইয়ার করা নকশা পণ্ডিত জওহারলাল নেহেরুর ভালো লাগায় তিনি নিজের গাড়ীর বনেটে তা লাগিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেটাই ভারতের জাতীয় পতাকার মর্যাদা পায়। এই নারী অহিংস স্বাধীনতা আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। এই সত্যটিও কখনো সামনে আনা হয়নি। ভারতীয় ইতিহাসবিদদের লেখায় সুরাইয়ার নকশা করা পতাকার তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বিদেশি বেশ কিছু লেখকের লেখায় সুরাইয়ার কথা উঠে এসেছে। ফেরদৌস বেকনের ‘ভারতের ইতিহাস বিকৃতি ও সুরাইয়ার অস্বীকৃতি‘ নামক লেখায়ও আছে এই ইতিহাসের বিস্তারিত। যদিও ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিসেবে সর্বত্র যে নামটি পাওয়া যায় সেটি হলো পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। কিন্তু তিনি কী বাস্তবে ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার না। অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে এক মুসলিম নারীর নাম। সুরাইয়া বদরুদ্দিন তায়াবজি। সুরাইয়ার স্বামী ছিলেন বদরুদ্দিন ফাইজ তায়াবজি। তিনি একজন ভারতীয় সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) অফিসার হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। সে সময়েই ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেন তার স্ত্রী। এরপর নেহরুর কাছে পতাকাটি নিয়ে গেলে তিনি তা পছন্দ করেন এবং তার গাড়িতে লাগিয়ে নেন। এরপর এ পতাকাটিই গৃহীত হয় ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে। কিন্তু ডিজাইনার হিসেবে অজ্ঞাত কারণে কখনোই সুরাইয়ার নামটি ইতিহাসে তোলা হয়নি। সুরাইয়া তায়াবজির তৈরি করা জাতীয় পতাকাটি প্রথম গৃহীত হয় ১৭ জুলাই ১৯৪৭ সালে।