জেলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চন্দ্রযান ৩-এর সফল অভিযানে বাংলার ৩১ জন বাঙালি বিজ্ঞানী

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে গিয়েছে ভারত চন্দ্রযান ৩। বুধবার ২৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিট চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। ইসরোর এই সাফল্যে অভিবাদনের বন্যা বয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, নাসাও চন্দ্রযানের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু, জানেন কী এই চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের জন্য যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করছেন সেই সকল বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার ছেলেরাও। ‘চন্দ্রযান ৩’ -এর গোটা অভিযানেই বাংলার জয়জয়কার। সাফল্যের সঙ্গে নাম জুড়েছে বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি সহ একাধিক জেলার।  জলপাইগুড়ির বাসিন্দা কৌশিক নাগ। তিনি জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন হোলি চাইল্ড নামক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ২০১১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পাশ করে, ২০১৮ সালে দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-তে যোগদান করেন। এর আগে, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ টিমেরও সদস্য ছিলেন কৌশিক। সেবারে অল্পের জন্য ফস্কে ছিল লক্ষ্য। কিন্তু এবার তা হয়নি। বর্তমানে তিনি চন্দ্রযান ৩-এর সফটওয়্যার অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা তুষারকান্তি দাস। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক। এরপর আইআইটি খড়গপুর এবং আইএসএম ধানবাদে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। তিনিও চন্দ্রযান ৩ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।  বীরভূমের মল্লারপুর দক্ষিণগ্রামের বাসিন্দা বিজয় কুমার দাই। কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বিটেক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমটেক। করেন। তিনি চন্দ্রযান ৩-এর ‘অপারেশন টিম’-এর সদস্য। বীরভূমেরই সিউড়ি রায়পুরের বাসিন্দা সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ইসরোর রিমোট সেন্সিং স্পেসক্রাফ্ট মিশনের সঙ্গে যুক্ত। চন্দ্রযান ৩ অভিযানের মিশন সফটওয়্যারের ডিরেক্টর তিনি।  উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা অনুজ নন্দী। তিনি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতোকত্তর করার পর এমটেক করেন। পরে পিএইচডিও করেন। চন্দ্রযান ৩-এর প্রোপালশান মডিউলে থাকা ‘শেপ’ পেলোড নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর কাটালের বাসিন্দা পীযূষকান্তি পট্টনায়কের। তিনি কল্যাণীর সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যালে বিটেক করেন। এরপর খড়গপুর আইআইটি থেকে এমটেক করেছেন। তিনি চন্দ্রযান ৩-এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে ছিলেন।  বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বাসিন্দা কৃশানু নন্দী। তিনি আরসিসি ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকলোনজি থেকে বিটেক ডিগ্রি অর্জন করে। এরপর যাদবপুর থেকে এমটেক করেন। চাঁদের মাটিতে রোভার প্রজ্ঞানের গতিবিধি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। 

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ৩১ জন বাঙালি বিজ্ঞানী ছিলেন টিম চন্দ্রযান ৩ অভিযানে। দেখে নিন সেই তালিকা – 

১) কৌশিক নাগ, জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চন্দ্রযান ৩-এর সফটওয়্যার অপরেশন
২) তুষারকান্তি দাস, আইআইটি খড়গপুর এবং আইএসএম ধানবাদ, চন্দ্রযান ৩-এর ডেপুটি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর
৩) সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিারিং, চন্দ্রযান ৩-এর অপরেশন ডিরেক্টর (সফটওয়্যার)
৪) অনুজ নন্দী, রায়গঞ্জ কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, চন্দ্রযান ৩-এর শেপ ম্যানুফ্যাকচারিং
৫) কৃশানু নন্দী, আরসিসি ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ও রোভার কন্ট্রোল
৬) বিজয় কুমার দাই, ভিলেজ স্কুল, রামকৃষ্ণ মিশন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, চন্দ্রযান ৩-এর অপরেশন টিমের সদস্য
৭) পীযূষকান্তি পট্টনায়ক, কল্যাণীর সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যালে বিটেক, খড়গপুর আইআইটি থেকে এমটেক, চন্দ্রযান ৩-এর টেম্পারেচার কন্ট্রোল
৮) তীর্থপ্রতিম দাস, সেন্ট লরেন্স হাইস্কুল, চন্দ্রযান ৩-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর
৯) সায়ন চ্যাটার্জি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
১০) অমিত মাঝি, রামকৃষ্ণ মিশন
১১) সৌরভ বসু, ডন বসকো
১২) সমিতেশ সরকার, উত্তরপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শিবপুর আইআইইএসটি
১৩) দেবজ্যোতি ধর, শিবপুর আইআইইএসটি
১৪) চয়ন দত্ত, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ বিভাগ
১৫) আর্য রানা, তমলুক হ্যামিলটন
১৬) তসিকুল ওরা, কে এন কলেজ, বহরমপুর
১৭) নীলাদ্রি মৈত্র, মছলন্দপুর নাকপুল স্বামীজী সেবাসঙ্ঘ
১৮) জয়ন্ত লাহা, উত্তরপাড়া সরকারি হাইস্কুল, শিবপুর আইআইইএসটি, ইলেক্ট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন

১৯) অমিতাভ গুপ্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
২০) বুলবুল মুখোপাধ্যায়, সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুলে
২১) জয়ন্ত পাল, তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বারাসত সরকারি কলেজ, খড়গপুর আইআইটি
২২) পঙ্কজ নাথ, নর্থ ইস্টার্ন ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
২৩) রাজীব সাহা, উশুমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, আইআইটি খড়গপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
২৪) বরুণ বিশ্বাস, বিআইটি কলকাতা
২৫) সুব্রত চক্রবর্তী, নর্থ ইস্টার্ন ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
২৬) রিন্টু নাথ, আইআইইএসটি
২৭) মহম্মদ মোশাররফ হুসেন, বিশ্বভারতী, দিল্লি আইআইটি
২৮) সৌরভ মাজি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
২৯) দেবজ্যোতি ধর, আইআইইএসটি
৩০) সায়ন চট্টোপাধ্যায়, বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন
৩১) মৌমিতা দত্ত, হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে