বিশ্বে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন তৈরির করার দাবি জানালো রাশিয়া। গতকাল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, ‘স্পুটনিক-ভি’ নামের এই ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম । তাঁর মেয়ের উপর ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে । তিনি ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন পুতিন । আজ রুশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে পুতিন ভ্যাকসিনের বিষয়ে ঘোষণা করেন । রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো জানিয়েছেন, “জানুয়ারি মাস নাগাদ গণ টিকাকরণ শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে”। অর্থাৎ টিকা আবিষ্কার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু খোদ রাশিয়ার সাধারণ মানুষই এখন তা নাগালের মধ্যে পাবেন না। তা পেতে পেতে আরও অন্তত চার মাস অপেক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে উঠে আসছে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনের দৌড়ে থাকা আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষত, যেভাবে তড়িঘড়ি ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে, তাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যথোচিতভাবে হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পশ্চিমী দেশগুলির বিশেষজ্ঞরা। এতদিন ধরে ভ্যাকসিন নিয়ে সাফল্যের দৌড়ে এগিয়ে ছিল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনকা। ছিল মোডার্না, ফাইজারের মতো সংস্থাও। তাদের টেক্কা দিতেই রাশিয়া তড়িঘড়ি স্পুটনিক-ভি আনার কথা ঘোষণা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? তাঁদের প্রধান অভিযোগ, রাশিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিন এখনও মানব ট্রায়ালের সমস্ত ধাপ উত্তীর্ণ হয়নি। তাই এর কার্যকারিতা সংশয়াতীত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন বলেছে, সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য কঠোরভাবে পর্যালোচনা করেই ছাড়পত্র দেবে তারা। রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংস্থা যোগাযোগ রেখে চলছে। ভ্যাকসিনের পূর্ব যোগ্যতা অর্জনের নিরিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কথা চলছে। আবার প্রাক্তন মার্কিন এফডিএ কমিশনার স্কট গোতিলেব সাফ বলেছেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হলে এটা নেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়।’ প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্যই প্রকাশ করেনি রাশিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই ভ্যাকসিন এখনও প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। ফেজ টু বা ফাইনাল স্টেজ পরীক্ষা, যেখানে কয়েক হাজার মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়, তা করা হয়নি বলে অভিযোগ আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো দেশের বিশেষজ্ঞদের।’প্রথম’ হতে গিয়ে গুণমানের সঙ্গে আপস করা হয়েছে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির লরেন্স গস্টিন, মার্কিন সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যান্টনি ফাউচিও। সাধারণত যে কাজে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগে, তা দু’মাসে কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তাঁদের।