দেশ

এবার সপ্তাহে ৫ দিন খোলা থাকবে ব্যাঙ্ক!

এবার ব্যাঙ্কের নিয়মে আসছে বড়সড় পরিবর্তন। অবশেষে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। সপ্তাহে ৫দিন ব্যাঙ্ক খোলা রাখার দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষগুলি। এখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ছাড়পত্র মিললেই নয়া নিয়ম কার্যকর হবে। এ খবরে স্বভাবতই খুশি ব্যাঙ্কের কর্মী-আধিকারিকরা। তবে গ্রাহকদের জন্য বিষয়টি মোটেও সুখকর নয়। তাঁদের অধিকাংশের বক্তব্য, রবিবার তো বন্ধ থাকতই। এতদিন মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবারও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকত। তবে বাদবাকি শনিবারগুলিতে পরিষেবা মিলত। সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী অনেকেই শনিবারের ছুটিতে ব্যাঙ্কের কাজ সারতেন। নয়া নিয়ম লাগু হওয়ার পর এই ধরনের গ্রাহক ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য কাজের দিনে ছুটি নিতে বাধ্য হবেন। তাই গ্রাহকদের কেউ কেউ বলছেন, ঘুরপথে এও এক ধরনের কর্মনাশা সিদ্ধান্ত!  অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, সপ্তাহে পাঁচদিন ব্যাঙ্ক খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার মুম্বইতে একটি বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলির সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন এবং কর্মী-অফিসারদের সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়নসের প্রতিনিধিরা। সেখানেই ব্যাঙ্কগুলি সপ্তাহে পাঁচদিন খোলা রাখার দাবি মান্যতা পায়। ঠিক হয়, সোম থেকে শুক্রবার ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে এবং প্রতি শনি ও রবিবার বন্ধ থাকবে। পরিষেবার দিনসংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে দৈনিক কাজের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪০ মিনিট খোলা রাখতে হবে ব্যাঙ্ক। সকাল ১০টার পরিবর্তে ৯টা ৫০ মিনিটে ব্যাঙ্ক খুলবে এবং বিকেল ৫টার পরিবর্তে সাড়ে পাঁচটায় বন্ধ হবে। এই প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিলমোহর দিতে সেটি অর্থমন্ত্রকের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসে পাঠানো হচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলি নিজেরাই যেহেতু এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সিলমোহর সহজেই মিলবে বলে মনে করছেন সঞ্জয়বাবুরা। প্রসঙ্গত, গত ছ’-সাত বছর ধরে এই দাবি উঠলেও করোনার পর তা জোরালো হয়। সম্প্রতি সবক’টি ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের অন্যতম ইস্যুও ছিল এটাই। 
 কিন্তু ‘ব্যাঙ্কিং আওয়ার’ বা কাজের সময় বাড়লেই কি গ্রাহকদের পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ ও সময় বাড়বে? সঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, বিকেল ৪টে পর্যন্তই আর্থিক লেনদেন করা যাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে তারপর এলে আর্থিক লেনদেন না হলেও অন্যান্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবা মিলবে। এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘নয়া নিয়ম চালু হলে সব ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে। সেই তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাঙ্ক বা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কও থাকবে।’ এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ব্যাঙ্কগুলিতে কাজের সময় যদি বাড়ানো হয়, তাহলেও গ্রাহকদের আদতে কোনও বাড়তি লাভ হবে না। কারণ, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সময় একই থাকছে। এমনিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ভিড় লেগেই থাকে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন প্রবীণ নাগরিকরা। গ্রাহকদের আশঙ্কা, কাজের দিন কমে গেলে ভিড় আরও বেড়ে যাবে। তাই কতটা সুষ্ঠু পরিষেবা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।  আপাতত জানা গিয়েছে, নয়া নিয়ম চালু হলে সরকারি ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও এই নয়া প্রযোজ্য হবে।