সীমান্তে রাতভর পাকিস্তানের হামলার পর শুক্রবার সকালে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ ও তিন সেনা প্রধানের সঙ্গে উচ্চস্তরীয় বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷ অন্যদিকে, ভারত-পাক সীমান্ত এবং দেশের বিমানবন্দরগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ এর মাঝে দেশের ‘চিফ অফ আর্মি স্টাফ’-কে বিশেষ ক্ষমতা দিল কেন্দ্রের মোদি সরকার ৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালের টেরিটোরিয়াল আর্মি-র ৩৩ নম্বর আইনের আওতায় সিএএস-কে এই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ৷ এই ক্ষমতাবলে দেশের সব টেরিটোরিয়াল আর্মি অর্থাৎ আঞ্চলিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে ডেকে পাঠাতে পারবেন চিফ অফ আর্মি স্টাফ উপেন্দ্র দ্বিবেদী ৷ বুধবারের পর বৃহস্পতিবার রাতে ফের জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়ের সেনাঘাঁটিকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা চালায় পাকিস্তান ৷ পরিস্থিতি এমনই উত্তপ্ত ছিল যে মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ফোন করে উত্তেজনা প্রশমনের আবেদন জানান ৷ এদিন সকালে সাউথ ব্লকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনামূলক উচ্চস্তরীয় বৈঠক করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷ বৈঠকে ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনা প্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল এপি সিং এবং নৌ-সেনা প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী ৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিব রাজেশকুমার সিং-ও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৷ সূত্রের খবর, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে কী কী ঘটে চলেছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে ৷পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলার মাঝে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল কয়েকজন জঙ্গি ৷ সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছে বিএসএফ ৷ আধাসামরিক বাহিনীর চালানো গুলিতে নিকেশ হয়েছে কমপক্ষে সাত জন জঙ্গি ৷ পাশাপাশি পাকিস্তান রেঞ্জার্স-এর পোস্টও ধ্বংস করেছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স৷ এরপরই জরুরি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ তিনি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নেন ৷ এর সঙ্গে দেশের বিমানবন্দরগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন ৷ বিএসএফ সীমান্তে প্রহরা দেয় এবং সেন্ট্রাল ইনডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) দেশের বিমানবন্দর এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ৷ এই বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব গোবিন্দ মোহন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর তপন ডেকা, বিএসএফ, সিআইএসএফ-এর ডিজি এবং অসামরিক বিমান পরিষেবার নিরাপত্তা ব্যুরোর শীর্ষ আধিকারিকরা ৷বৃহস্পতিবার রাতে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সংলগ্ন শহরগুলিতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান ৷ রাত ১০ টার পর থেকে টানা ৭ ঘণ্টা পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট ছিল গুজরাতের সীমান্তবর্তী কুচ এবং বনাসকাঁঠা জেলা ৷ জম্মু, পাঠানকোট এবং উধমপুরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পরদিন সকালেই জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ৷ এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সারারাত জেগে ছিলেন ৷ ভারতীয় সেনা এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, পাক সেনা ড্রোন এবং অন্য অস্ত্রের সাহায্যে ভারতের পশ্চিম দিকের সীমান্তে হামলা চালিয়েছে ৷ জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করে ক্রমাগত গুলি চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ৷ তবে পাক সেনার ড্রোন হামলা রুখে দিয়েছে ভারতীয় সেনা ৷ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবও দেওয়া হয়েছে ৷ ভারতীয় সেনা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ৷ যে কোনও রকম হামলার যথোপযুক্ত জবাব দেবে বাহিনী ৷ সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, ভারতে নির্মিত ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধকারী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আকাশ পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ৷ গতকাল ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে একটি সর্বদল বৈঠক করে মোদি সরকার ৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে হওয়া এই বৈঠকে তিনি বিরোধী শিবিরকে জানিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুর এখনও চলছে ৷ এদিনই সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং দুই সেনা আধিকারিক সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ৷ এই বৈঠকে বিদেশ সচিব স্পষ্ট করেন, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা চালিয়ে প্ররোচনা দেওয়া শুরু করেছিল পাকিস্তান ৷ ৭ মে অপারেশন সিঁদুর তার জবাব মাত্র ৷ তাই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমবে না বাড়বে তা নির্ভর করছে পাকিস্তানের উপর ৷ ভারত কোনও উত্তেজনা চায়নি ৷ পাকিস্তান যদি তেমন কিছু করে, তাহলে ভারতও তার জবাব দিতে ছাড়বে না ৷
