বাংলার বুকে সরকারি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের অভাব মেটাতে ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক্তারিতেও ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে। সেই ঘোষণামাত্র রাজ্যজুড়ে ‘গেল গেল’ রব পড়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তো বয়ে চলেইছে সেই সঙ্গে এক এক করে মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে চিকিৎসকেরাও। কিন্তু তাঁদের একটু জানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে যে বাম জমানা থেকেই বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ডাক্তার-দের উপস্থিতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, এখনও রাজ্যের স্বাস্থ্যদফতরের অধীনে বাংলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করে চলেছেন ৩১১জন ডিপ্লোমা ডাক্তার। বাম জমানায় ‘সরকার অনুমোদিত’ সাড়ে তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করে ৩০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক এখনও কাজ করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যদফতরে। ৯০-এর দশকে এরা কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁরা দেখে ফেলেছেন কয়েক লক্ষ রোগী। বহু ব্লকে বিএমওএইচ হিসেবে কাজ করছেন তাঁরাই। অনেকে এখন অবসরের দোরগোড়ায়। স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮০, ৮১ ও ৮২ সালে মোট ৩১১ জন ডিপ্লোমা ডাক্তারকে কাজে নেয় রাজ্য সরকার। সেই সময় তাঁদের প্রথমে Community Health Officer হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় তাঁরা চিকিৎসক হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তার জেরে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তাঁদের আরও সাড়ে চার বছরের কোর্স করতে বললে অনেকে তাও করেন। সেই কোর্স শেষে তাঁরা Additional Medical Officer হিসাবে চিহ্নিত হন। পরবর্তীকালে এরাই কেউ BMOH হয়েছেন তো কেউ চিকিৎসক হিসাবেই কাজ করে চলেছেন। গ্রামীণ এলাকায় বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এরাই কার্যত চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা অপারেশনও করছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে মমতা তাহলে ভুল কী বলেছেন বা করছেন যে তাঁর বিরুদ্ধে এতটাই সরব হতে হবে? জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই কমিটিতে থাকছেন IMA ও মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্যরা। আগামী ১ মাসের মধ্যে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন যে রাজ্যে ডাক্তারির ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা যাবে কী যাবে না। যদি সেই কোর্স চালু করা সম্ভব হয় তাহলে অনেক বেশি যুবক-যুবতীর জন্য খুলে যাবে ডাক্তারি পড়ার দরজা। অবশ্য শুধু বাংলাতেই নয়, দিল্লির এইমস, ভেলোরের সিএমসি, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, বিহার, তামিলনাড়ুর কয়েকটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এখনও নানা বিষয়ে ডাক্তারির ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় ‘কনডেন্সড মেডিকেল কোর্স’ চালু সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন। সেই ছবি এখন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যদিও সেই কোর্স শুরু হতে না হতেই বন্ধ হয়ে যায়।