দুই ইস্যুকে ইদানীং বহু যোজন ছাপিয়ে গিয়েছে মোদি সরকারের এজেন্সি-সক্রিয়তা। বিরোধীদের অভিযোগ, যেখানে গেরুয়া শিবির কায়দা করতে পারছে না, সেখানেই হানা দিচ্ছে ইডি-সিবিআই। লক্ষ্য একটাই, যেভাবে হোক নিশ্চিহ্ন করতে হবে বিরোধীদের। উদ্দেশ্য এবং টাইমিংও সর্বত্র মানানসই। আজ, শুক্রবার মোদি বিরোধী তাবৎ শক্তি উপস্থিত হচ্ছে পাটনার গান্ধী ময়দানে। আর বুধবার গভীর রাতে প্রবীণ জেডিইউ নেতা তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরীর শ্যালক তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি অজয়কুমার সিংয়ের বেগুসরাইয়ের বাড়িতে হানা দিল এজেন্সি। ইডি এবং আয়কর দপ্তরের যৌথ অভিযান। এ যেন অদ্ভুত সমাপতন। এই ইস্যুতে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিহারে। বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। আর ঠিক এই আবর্তে বৃহস্পতিবার বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ পাটনার জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমানবন্দরের রানওয়ে ছুঁল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমান। আর তৎক্ষণাৎ যেন বিস্তৃত হতে শুরু করল গেরুয়া শিবির বিরোধিতার পরিসর। ঐতিহাসিক বিরোধী সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত। ১৮’র বেশি দল। এবং তাদের সুপ্রিমোরা। অপেক্ষা যেন ছিল মমতারই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে বিরোধীদের এই মহাজোটে যোগ দিতে পৌঁছে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর পাটনায় নেমেই তাঁর স্পষ্ট বার্তা, গেরুয়া স্বৈরতন্ত্রের জবাব দিতে প্রস্তুত জোট। সব বিরোধীরা এক হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব। লড়ব একের বিরুদ্ধে এক। বিরোধীদের এই যৌথ পরিবারই বিজেপিকে হটাবে। দেশে যে বিপর্যয় চলছে, তার জন্য মানুষ একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে অধীর চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির এক এবং একমাত্র ‘টার্গেট’ তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু বিহার কংগ্রেসের ঢাউস হোর্ডিং-তোরণ দেখে তা বোঝার জো নেই। অ্যানে মার্গই হোক, কিংবা সার্কুলার রোড, নেহরু পথ বা বেলি রোড—পাটনা শহরজুড়ে হাত শিবিরের তোরণ-হোর্ডিংয়ে সোনিয়া গান্ধীর ছবির পাশেই জ্বলজ্বল করছে মমতার মুখাবয়ব। কেন? তার জবাব মিলল বিহার প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কিষেন চৌধুরীর কথায়-‘মমতাদি দেশের অন্যতম নেত্রী। তাঁকে বাদ দিয়ে জোট হয় না।’ এদিন বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ১০, সার্কুলার রোডে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীর সরকারি আবাসনে যান মমতা। সেখানেই বর্ষীয়ান লালুপ্রসাদ যাদব, রাবড়ি দেবী এবং বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব স্বাগত জানান তৃণমূলনেত্রীকে। একযোগে বলেন, ‘আপনি আসায় জোট গঠনের প্রক্রিয়াট অনেক সহজ হবে।’ বাংলার কাঁথা স্টিচের উত্তরীয়, মধুবনী শাড়ি, বুদ্ধদেবের মূর্তির মতো উপহারও বিনিময় হয়েছে বিজেপি বিরোধী দু’পক্ষের। লালুপ্রসাদ পর্ব শেষে পাটনার জিলা অতিথি গৃহে ফিরে আসেন মমতা। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সেখানে গিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে দেখা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। জল্পনা ছিল কেজরিওয়ালকে নিয়ে। মমতার হস্তক্ষেপে তাও মিটল। সন্ধ্যায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে সঙ্গে নিয়ে পাটনায় পৌঁছে যান কেজরিওয়াল। রাতে চলে এসেছেন এম কে স্ট্যালিন, ডি রাজা, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরাও। আজ সকালে মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে সঙ্গে নিয়ে পাটনায় আসার কথা রাহুল গান্ধীর। বিরোধী এই বৃত্তের ভবিষ্যৎ কী, এখন সেটাই দেখতে উৎসুক দেশ!