ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল বিশেষ আদালত ৷ শুক্রবারই বেঙ্গালুরুর জনপ্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের ৪টি মামলা রয়েছে ৷ তার মধ্যে একটি মামলায় এদিন সাজা ঘোষণা হল ৷ সাজার পাশাপাশি রেভান্নাকে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার জরিমানাও করেছে আদালত ৷ এর মধ্যে ১১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নির্যাতিতাকে দেওয়া হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রাক্তন সাংসদের ধর্ষণের বহু ভিডিয়ো পেনড্রাইভে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তাঁর মোবাইল থেকেও বহু ধর্ষণের ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছে বলে খবর ৷ এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক নির্যাতিতা ৷ কর্ণাটকের হাসান লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার নাতি ৷ এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এইচডি কুমারাস্বামীর ভাইপো ৷ প্রাক্তন জেডি(এস) সাংসদের বাবা কর্ণাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী ৷ ৪৮ বছর বয়সি এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার বেঙ্গালুরু বিশেষ আদালতের বিচারক গজানন হেজ প্রাক্তন জেডি(এস) সাংসদ প্রজ্জ্বলকে দোষী সাব্যস্ত করেন ৷ ওই মহিলা তাঁদের খামার বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন ৷ খামার বাড়িটি বেঙ্গালুরু থেকে ১১০ কিমি দূরে অবস্থিত ৷ নির্যাতিতা মহিলা মাইসোর জেলার বাসিন্দা ৷ ২০২১ সালে তাঁকে প্রজ্জ্বল দু’বার ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা ৷ পাশাপাশি সেই ধর্ষণের ভিডিয়ো প্রজ্জ্বল তাঁর মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ ৷ এদিন আদালতে মামলাকারী পক্ষ প্রজ্জ্বলের যাবজ্জীবন সাজার আবেদন জানায় ৷ তখন আদালতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দেবগৌড়ার নাতি ৷ তাঁর সাজা কমানোর জন্য কাকুতিমিনতি করতে থাকেন হাসানের প্রাক্তন সাংসদ ৷ আদালতে রেভান্না বলেন, “আমি বিই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ৷ সবসময় নিজের মেধার জোরে পাশ করেছি ৷ ওরা বলছে, আমি নাকি একাধিক মহিলাকে ধর্ষণ করেছি ৷ কিন্তু কোনও মহিলা নিজে থেকে এগিয়ে এসে অভিযোগ জানাননি ৷ ওরা মাত্র ছ’দিন আগে (গত বছরের লোকসভা নির্বাচন) আগে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে ৷ মামলাকারী পক্ষ ওদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিয়ে এসেছিল ৷ তাঁদের দিয়ে জোর করিয়ে অভিযোগ দায়ের করে ৷” তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন 34 বছর বয়সি প্রজ্জ্বল ৷ তিনি জানান, নির্যাতিতা কারও কাছে অভিযোগ জানাননি ৷ এমনকী তিনি তাঁর স্বামী বা কোনও আত্মীয়ের কাছেও ধর্ষণের অভিযোগের কথা বলেননি ৷ বিশেষ কয়েকটি ভিডিয়ো যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখনই ওই মহিলা অভিযোগ দায়ের করেন ৷ প্রাক্তন জেডি(এস) নেতা আদালতে জানান, তিনি সাজা মাথা পেতে মেনে নেবেন ৷ প্রজ্জ্বল বলে চলেন, “আমার পরিবার আছে ৷ আমি গত ছ’মাস ধরে আমার বাবা-মাকে দেখিনি ৷ দয়া করে আমার সাজা কমিয়ে দিন ৷ শুধু এটুকুই আমার আবেদন ৷ রাজনীতিতে অনেক তাড়াতাড়ি উপরে উঠেছি ৷ আমার জীবনে এটাই একটা ভুল আমি করে ফেলেছি ৷” এই মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি অশোক নায়কের বক্তব্য, “এমপি-এমএলএ বিশেষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, নির্যাতিতা এখন সমাজের মুখোমুখি দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়েছিলাম ৷ সেই অনুযায়ী দোষীকে সাজা দেওয়া হয়েছে ৷ আদালত এটাও দেখেছে অভিযুক্ত একজন সাংসদ ছিলেন ৷ তাই যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয়েছে ৷” তিনি আরও জানান, আদালত প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে 11 লক্ষ 50 হাজার টাকা জরিমানা করেছে ৷ এর মধ্যে 11 লক্ষ 25 হাজার টাকা ওই নির্যাতিতাকে দেওয়া হবে ৷


