দেশ

৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতে গিয়ে পাকড়াও কর্নাটকের বিজেপি বিধায়কের আমলা ছেলে, বাড়িতে রাতভর তল্লাশির পর উদ্ধার আরও ৮ কোটি

বাবা বিজেপি বিধায়ক। ছেলে রাজ্য সরকারের আমলা। এহেন সুযোগ্য-পুত্রই এবার সরকারি অফিসে বসে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার। শুধু তাই নয়, ছেলের গ্রেপ্তারির পর বিধায়কের অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মিলেছে ‘টাকার পাহাড়’। শুক্রবার বিজেপি শাসিত কর্ণাটকের এই ঘটনা সামনে আসতেই দেশজুড়ে আলোড়ন চরমে। সরকারি সূত্রে খবর, গতকাল রাতে দুই জায়গায় হানা দিয়ে উদ্ধার হয়েছে মোট ৮ কোটি টাকা। ঘটনার পর থেকেই উধাও বিধায়ক মাদাল বিরূপাক্ষাপ্পা। বিপাকে পড়ে এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তিনি ইস্তফাও দিয়েছেন। ভোটমুখী কর্ণাটকে এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে মুখ পুড়েছে মোদি-অমিত শাহের দলের। এই ইস্যুতে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ফের ‘৪০ শতাংশ কাটমানি’র সরকার চালানোর অভিযোগে সরব কংগ্রেসও। 
গত বিধানসভা নির্বাচনে দেবনগরী জেলার চান্নাগিরি আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন মাদাল বিরূপাক্ষাপ্পা। মাইসোর স্যান্ডাল সাবানের জন্য বিখ্যাত সরকারি সংস্থা কর্ণাটক সোপস অ্যান্ড ডিটারজেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যানও তিনি। তাঁর ছেলে প্রশান্ত মাদাল কর্ণাটক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেসের ২০০৮ ব্যাচের অফিসার। বর্তমানে সরকারি সংস্থা ব্যাঙ্গালোর ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়ারেজ বোর্ডের (বিডব্লুএসএসবি) মুখ্য হিসেবরক্ষক পদে কর্মরত। সরকারি বরাত পাইয়ে দিতে বিধায়ক বাবার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানতে পেরেই তৎপর হয়েছিল কর্ণাটক লোকায়ুক্তের দুর্নীতি দমন শাখা। বৃহস্পতিবার তাদের পাতা ফাঁদে পা দেন প্রশান্ত। দপ্তরে বসে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময়ই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বেশি রাত পর্যন্ত বিধায়কের অফিস ও বাড়িতে চলে তল্লাশি। অফিস থেকে উদ্ধার যায় ১.৭ কোটি টাকা। বাড়িতে পাওয়া যায় আরও ৬ কোটি। লোকায়ুক্তের তরফে জানানো হয়েছে, সাবান ও ডিটারজেন্টের কাঁচামাল কিনতে বিধায়ক পুত্র এক ঠিকাদারের কাছে ৮১ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছিল। সেইমতো অভিযান চালানো হয়। ঘুষের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪০ লক্ষ টাকা নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান প্রশান্ত। পরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা। অন্তত তিনটি টাকা-ভর্তি ব্যাগ আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপি বিধায়কের ভূমিকাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, ‘টাকার পাহাড়’ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে বেপাত্তা ছিলেন বিরূপাক্ষাপ্পা। আদালতে আগাম জামিনের আবেদন পর্যন্ত করেন। কিন্তু চাপ বাড়তে থাকায় শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকে চিঠি লিখে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। চিঠিতে তাঁর সাফাই, ‘আমার পরিবারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই অবশ্য বিড়ম্বনা ঢাকতে নিশানা করেছেন বিরোধীদল কংগ্রেসকেই। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস সরকারের আমলে লোকায়ুক্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। দুর্নীতি মোকাবিলায় আমরাই নতুন করে লোকায়ুক্ত গঠন করি। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—এই ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্তের কাজ চলবে।’ তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার তোপ দেগেছেন, ‘৪০ শতাংশ কাটমানি সরকারের লুট অব্যাহত। বাবা চেয়ারম্যান, ছেলে টাকা তুলছেন! বিজেপিতে দুর্নীতির আরামদায়ক আঁতাত চলছে!’