সংসদে ‘হামলা’র ঘটনা জেরে এবার কড়াকড়ি করা হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। বিধায়ক থেকে ভিজিটর, বিধানসভার কর্মী থেকে সাংবাদিক – সবার জন্য আজ, শুক্রবার থেকে লাগু হচ্ছে নয়া নিয়ম। বিধানসভার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। এবার থেকে প্রতিটি ভিজিটরকে ‘ফেস রেকগনেশন’ যন্ত্রে নিজের ছবি তুলিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করানো হবে। সংসদে হামলার ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে আলোড়ন পরে গিয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় গাফিলতি ছিল বলে তথ্য উঠে এসেছে। এই অবস্থায় সংসদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভার আধিকারিক ও নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বৈঠক করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার থেকে বিধানসভায় প্রবেশের সময় ভিজিটরদের ছবি তোলা হবে। তারপর তাঁর পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে দেখে সার্চ করা হবে। নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ওই ভিজিটর বিধানসভায় প্রবেশের ছাড়পত্র পাবেন। কতক্ষণ তিনি বিধানসভায় থাকতে পারবেন, তার সময় এন্ট্রি পাসে লিখে দেওয়া হবে। এর আগে দেখা গিয়েছে, বিধায়কদের গাড়িতে করে পরিচিতরা বিধানসভায় প্রবেশ করেন। কিন্তু এবার থেকে তা আর হবে না। বিধায়করা গাড়িতে করে প্রবেশ করবেন দক্ষিণ দিকের গেট দিয়ে। বিধায়কদের সঙ্গে থাকা বাকিরা পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। বিধায়ক, বিধানসভার কর্মী, সাংবাদিক সবার পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের শিফ্ট ভিত্তিক ডিউটি চালু হবে। যাতে সবসময় বিধানসভার গেটে এবং চৌহদ্দিতে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। তাঁরা সব বিষয়ে নজরদারি চালাবেন। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাইরের কেউ যাতে বিধানসভায় প্রবেশ করে গণ্ডগোল তৈরি করতে না পারে, তারজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আটোঁসাটোঁ করা হচ্ছে। তবে এই প্রশ্নটাও বিধানসভার অন্দরে উঠেছে, বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ নিষেধ অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। সেটা আরও কড়া হওয়া প্রয়োজন। এদিন কলকাতা পুলিসের পদস্থ কর্তারা বিধানসভায় এসেছিলেন। তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। এরই পাশাপাশি রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন’এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এদিন ডিরেক্টর- সিকিউরিটি পীযূষ পাণ্ডের উপস্থিতিতে কলকাতা পুলিস কর্তারা জরুরি বৈঠক করেন। ঠিক হয়েছে, নবান্ন’র প্রতি গেটে রাখা হচ্ছে ফেস রেকগনেশন ক্যামেরা। সূত্রের খবর, এদিন সকালে নবান্নে প্রবেশের সময় ভবনের নিরাপত্তার হালহকিকতের বিষয়ে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কলকাতা পুলিসকে বলা হয়েছে, সব গেটে নজরদারি রাখতে। যে গেট দিয়ে ভিজিটর এন্ট্রি, সেখানেও নিরাপত্তারক্ষীদের আরও দায়িত্ব সহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে নবান্নে যে বা যাঁরা ভিআইপি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন, তাঁদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখা হবে। দিনভর নজরদারি থাকবে পার্কিং লটের গাড়িগুলিতে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা ইনপুটেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।