দেশের সমস্ত ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-কে দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ দিনে দিনে ক্রমবর্ধমান এই ধরনের অপরাধের ঘটনায় উদ্বিগ্ন শীর্ষ আদালত ৷ সোমবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো সাইবার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এর তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে নিযুক্ত করেছে ৷ দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নোটিশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ নিজ নিজ আওতাভুক্ত এলাকার সমস্ত ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া এফআইআর ও বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে আদালতে ৷ সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মতে অধিকাংশ সাইবার অপরাধ ও ডিজিটাল অ্যারেস্টের অপরাধগুলি মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি থেকে সংঘটিত হচ্ছে ৷ এই বিষয়টি আদালতে উল্লেখ করেন দুই বিচারপতির বেঞ্চ ৷ বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “আমরা মনে করছি, এই তদন্ত সিবিআই করবে ৷ এই ঘটনা সারা দেশে ঘটছে ৷ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার পেতে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করছেন ৷” বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানিকে প্রশ্ন করেন, এই তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কী পরিকাঠামো প্রয়োজন ৷ ডিজিটাল অ্যারেস্টের তদন্ত কীভাবে হবে, সেই বিষয়ে সিবিআইকে একটি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ বেঞ্চ বলে, “সিবিআই-এর এই তদন্তে কতটা অগ্রগতি হচ্ছে, সেদিকে আমরা নজর রাখব ৷ প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেব ৷” এই তদন্তে সিবিআই-এর আর কী কী প্রয়োজন, তা জিজ্ঞাসা করেছে বেঞ্চ ৷ পুলিশ বাহিনীর বাইরে কোনও সাইবার বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন কি না, জানতে চেয়েছে আদালত ৷ গত 17 অক্টোবর বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এক প্রবীণ দম্পতির ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি 3 নভেম্বর ৷ দেশে এই ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে ৷ এর অভিঘাত অত্যন্ত গুরুতর ৷ তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে এই তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত ৷ গতবারের শুনানিতে বেঞ্চ জানায়, “এই ধরনের ঘটনা একবার হচ্ছে, এমনটা নয় ৷ সংবাদমাধ্যমে বহুবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হয়েছে ৷ এই অবস্থায় প্রতারকরা বিচারবিভাগীয় নথির কপি কীভাবে জাল করে সাধারণ, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, তার উৎস খুঁজে বের করতে হবে ৷ এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য পুলিশকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে ৷” সম্প্রতি হরিয়ানার আম্বালায় এক প্রবীণ দম্পতি ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভুয়ো ফাঁদে পা দিয়ে এক কোটিরও বেশি টাকা খুইয়েছেন ৷ এরপর 73 বছর বয়সি এক প্রবীণ মহিলা দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইকে চিঠি দিয়ে এই ডিজিটাল অ্যারেস্টের বিষয়টি জানান ৷ তিনি বিচার সংক্রান্ত জাল নথির কথাও জানান ৷ বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়ো নথি দেখিয়ে এবং নিজেদের সিবিআই ও ইডির আধিকারিক পরিচয় দিয়ে দিনের পর দিন প্রবীণ দম্পতিকে প্রতারণা করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় কোটি টাকা তুলে নিয়েছে অপরাধীরা ৷


