আজ নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে পেগাসাস নিয়ে ফের কেন্দ্রকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠকে বৃহস্পতিবার মমতা বললেন, “ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির থেকেও ভয়ংকর এই পেগাসাস কেলেঙ্কারি।” সরাসরি কেন্দ্রকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এটা কিনেছে মানুষের কন্ঠ রোধ করতে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোট বদ্ধ হয়ে লড়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। মমতার কথায়, জুমলা বাজি, জুলুম বাজি করে দেশ চালানো যায় না। একইসঙ্গে তিনি বলেন আগামী ২৬জুলাই দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর সময় পেয়েছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। ইচ্ছা প্রকাশ করেন সময় পেলে দেখা করবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও। ফোন ট্যাপিংয়ের বিপদের ব্যপ্তি তুলে ধরতে চাইলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, ‘আজ মা-বোনেরা কোথায় কী কথা বলছে, স্বামী-স্ত্রী কী কথা বলছে তাও শুনে ফেলছে।’ অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রী আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, এটা শুধুমাত্র দু’চারজন নেতামন্ত্রী, সাংবাদিক বা ব্যবসায়ীর ব্যাপার নয়। এর বিপদ থেকে সাধারণ মানুষও রক্ষা পাবে না। তা বোঝাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর ফোনালাপও ট্যাপ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘ইজরায়েল থেকে ভারত সরকার এই ম্যালওয়ার কিনেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, তাঁর বাড়ির কাজের লোকেরও ফোনে আড়ি পেতেছে।’ একুশের মঞ্চ থেকেও বিচারপতিদের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মমতা। সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট যেন এ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে। শুধু ফোনের কথোপকথন রেকর্ড নয়। ফোন রেখে যদি মুখোমুখিও কথা বলা হয় তাহলেও সমস্ত কথা পেগাসাস রেকর্ড করে নিতে পারে বলে দাবি করেছেন মমতা। এদিন সে ব্যাপারে একটি উদাহরণও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ভোটের আগে একদিন কালীঘাটের অফিসে তিনি, অভিষেক, পিকে (প্রশান্ত কিশোর) এবং সুব্রত বক্সি কথা বলছিলেন। ফোনগুলো এক জায়গায় রাখা ছিল। কিন্তু ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সব রেকর্ড করে নিয়েছে। মমতা জানিয়েছেন, প্রশান্ত কিশোর ফোনের অডিট করাতে গিয়ে সবটা জেনেছেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি নিজের দলের নেতা-মন্ত্রীদেরও বিশ্বাস করেন না। RSS এর নেতাদের ফোনও ট্যাপিং করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ তাঁর। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদেরও সতর্ক করেছেন যে, তাঁরা যেন ফোনে সাবধানে কথা বলেন। গুরুত্বপূর্ণ কথা ফোনে না বলারই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী এও বলেছেন, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসটাইম কোনও কিছুই সেফ নয়। গতকালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে, তাই ফোনের ক্যামেরায় লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রেখেছেন। আজ সমস্ত মন্ত্রীদের নবান্নে পেগাসাস নিয়ে সাবধান করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘যত আধুনিক ফোন নেবেন, সুরক্ষা ততই কমে যাবে। তত কম নিরাপদ হবে সেই ফোনগুলো। ফেসটাইম নিরাপদ নয়। আমার ফোনও নিরাপদ নয়।’ তাই সমস্ত মন্ত্রীদের তিনি পরামর্শ দেন পুরানো বা ছোট অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপেল ফোন না ব্যবহার করতে। আর করলেও জরুরি বা গোপনীয় কথা সেই ফোনে না বলতে, দেখা করে সামনা সামনা কথা বলাই শ্রেয় বলে মতামত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।