বিনোদন

জলে ডুবে মৃত্যু নয়, বিষ খাওয়ানো হয় জুবিন গর্গকে, জেরায় জানাল অভিযুক্ত

সিঙ্গাপুরে জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর দাবি ৷ ‘ইয়া আলি’ খ্যাত গায়কের মৃত্যুর ঘটনায় সর্বপ্রথম গ্রেফতার হয় তাঁর ব্যান্ডসদস্য শেখরজ্যোতি গোস্বামী । পাশাপাশি, গ্রেফতার হয় সিঙ্গাপুরে নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্য়ালের আয়োজক শ্যামকানু মোহন্ত, জুবিন গর্গের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও দুই ব্যান্ড সদস্য ৷ তার মধ্যে একজন শেখরজ্যোতি ৷ অন্যজন অমৃতপ্রভা মোহন্ত ৷ পুলিশি জেরায় শেখরজ্যোতি জানিয়েছে, গায়ককে বিষ দেওয়া হয়েছে ৷ ঘটনার অন্তত প্রায় 15 দিনের মাথায় অর্থাৎ শুক্রবার সিঙ্গাপুর সরকারের তরফ থেকে জুবিনের স্ত্রী গরিমার হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। অসম সরকারের করা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও সামনে আসেনি ৷ তার মাঝেই এবার উঠে এল নতুন অভিযোগ। গত 19 সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মৃত্যু হয় জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গের। সিঙ্গাপুরে নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সমুদ্রে নেমে স্কুবা ডাইভিং করার সময় জুবিনের খিঁচুনি হয় জলের মধ্যেই। ডুবে যেতে থাকেন তিনি ৷ এমন বেশকিছু দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ৷ তবে সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আরও পরে এমন খবরও সামনে আসে যে জুবিনের মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৷ এমনিতেই মৃগী রোগীকে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন জলের কাছে না-যেতে ৷ তারপরও তিনি জলে নেমেছিলেন ৷ এই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের ৷ পুলিশি জেরায় গোস্বামীর অভিযোগের তির গায়কের ম্যানেজারের দিকে। সে জানায়, জুবিন জলে নামার পরই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ৷ সেইসময়ই ডুবে যাচ্ছিলেন ৷ তখন সিদ্ধার্থ শর্মা চেঁচিয়ে উঠে বলে, ‘জাবো দে, জাবো দে’ অর্থাৎ ‘ওকে যেতে দাও, যেতে দাও’ ৷ পুলিশকে শেখরজ্যোতি আরও বলে, জুবিন গর্গ সাঁতারে দক্ষ ছিলেন… তাই তাঁর ডুবে মৃত্যু হতে পারে না ৷ অভিযোগে শেখরের আরও সংযোজন, “সিদ্ধার্থ, জুবিনকে বিষ দিয়েছে ৷ আর তাদের ষড়যন্ত্র গোপন করার জন্য বিদেশে নিয়ে গিয়েই এই কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে ৷ পাশাপাশি, সিদ্ধার্থ ওখানে উপস্থিত সকলকে ক্যামেরাবন্দি করা দৃশ্যগুলি কারও সঙ্গে যাতে শেয়ার না-করা হয় সেই নির্দেশও দিয়েছিল বলে দাবি শেখরের ৷ এই সমস্ত অভিযোগ পুলিশের দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তাতে স্বাক্ষর করেছেন জুবিনের মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্বে থাকা SIT সদস্য এবং সিনিয়র এসপি রোজি কালিতা ৷ সিআইডির 9 সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) বর্তমানে সিঙ্গাপুরে গর্গের মৃত্যুর তদন্ত করছে। অসম সরকার মামলাটি তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশনও গঠন করেছে। পাশাপাশি, গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্ৰ শইকিয়া এই বিচার বিভাগীয় কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, বহু মানুষের আইকন জুবিন গর্গের মৃত্যু যদি তাঁর পরিবারের কাছে কোনওদিক অস্বাভাবিক মনে হয় তাহলে তারা অসম সরকারের তৈরি করে দেওয়া কমিশনের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের মতামত জানাতে পারে। এর আগেও একাধিকবার জুবিনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ৷ দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত বা অসম সরকারের তরফ থেকে তদন্ত করার উদ্যোগ তিনিই নিয়েছেন ৷ এদিকে, শেখরজ্যোতি গোস্বামীর আরও দাবি, ঘটনার সময় জুবিনের মুখ ও নাক থেকে ফেনা বেরোতে দেখা গেলেও সিদ্ধার্থ চিকিৎসার ব্যবস্থা না-করে বলেছিল, ‘এ সমস্ত অ্যাসিডের কারণে হচ্ছে ৷ চিন্তার কোনও কারণ নেই। পাশাপাশি, ঘটনার দিন ইয়টে বেড়াতে গিয়ে শর্মা জোর করে বোটের নিয়ন্ত্রণ নেয়, ফলে মাঝসমুদ্রে সেটি বিপজ্জনকভাবে দুলতে থাকে। তারপর ওখানে উপস্থিত সকলে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল ৷ তবে তদন্তকারীদের সামনে সব অভিযোগ ইতিমধ্যেই অস্বীকার করেছে সিদ্ধার্থ শর্মা ও শ্যামকানু মহন্ত। আপাতত শ্যামকানু, সিদ্ধার্থ এবং জুবিনের দুই ব্যান্ড সদস্য শেখরজ্যোতি ও অমৃতপ্রভা মোহন্তকে 14 দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, অসমজুড়ে এখনও শোকের আবহে জুবিনের অনুরাগীরা। গায়কের অকালপ্রয়াণকে কেন্দ্র করে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। জুবিনের স্ত্রী গরিমা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্বামীর মৃত্যু নিয়ে। ক্রমশ সেই সন্দেহ বড় আকার ধারণ করছে ৷ বিশেষ করে গায়ক ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হল এবং কেন সাঁতার কাটাতে নামানো হল সেটা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।