জেলা

ঠাকুরবাড়িতে ভাঙন! আলাদা মতুয়া সংগঠন করলেন সুব্রত ঠাকুর

ঠাকুরবাড়ির অন্দরের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, তা সে পারিবিক বিষয় হোক বা রাজনৈতিক ৷ মমতা ঠাকুরের সঙ্গে শান্তনু-সুব্রত ঠাকুরের দ্বন্দ্বে একাধিকবার তপ্ত হয়েছে ঠাকুরনগরের মতুয়া ধাম । তবে, সব ক্ষেত্রেই এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে শান্তনু ও সুব্রতকে । সম্প্রতি দুই ভাইয়ের সেই সম্পর্কে যে চিড় ধরেছে তা ঠাকুরবাড়ির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যেত । জল্পনা ছিল নতুন মতুয়া সংগঠন করতে পারেন সুব্রত ঠাকুর । মঙ্গলবার সেই জল্পনাই সত্যি হল ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে মতুয়াদের তৃতীয় সমান্তরাল সংগঠন ঘোষণা করলেন সুব্রত ঠাকুর । সুব্রত ঠাকুরের নতুন এই সংগঠনকে শান্তনু ঠাকুর সাধুবাদ জানালেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুই ভাইয়ের মধ্যে এই ফাটল বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ । ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে একই রেজিস্ট্রেশনে দু’টি আলাদা মতুয়া সংগঠন ছিল এতদিন । একটির সঙ্ঘাধিপতি ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং অন্যটির মাথায় ছিলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর । প্রতিবছর রাস উৎসবের দিন সংগঠনের নতুন কমিটি তৈরি হয় । এই বছর ওই একই রেজিস্ট্রেশনে তৃতীয় ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের কমিটি’ গঠন করলেন শান্তনু ঠাকুরের দাদা তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ।

সংগঠনের প্রধান সেবায়েত হিসাবে বাবা বাবা মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর এবং মা ছবি রানি ঠাকুরকে বেছে নিয়েছেন সুব্রত । তবে চমকে দিলেন কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলী ঘোষণা করে ৷ তালিকার প্রথমেই রয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেই সঙ্গে রয়েছেন বিধায়ক অসীম সরকার, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার-সহ একাধিক বিজেপি বিধায়করা । নতুন কমিটি ঘোষণার সময় মতুয়া গোসাঁই-ভক্তদের পাশাপাশি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির দুই বিধায়ক স্বপন মজুমদার ও অসীম সরকারও । কমিটি গঠন নিয়ে এদিন সুব্রত ঠাকুর বলেন, “কোটি কোটি মতুয়া রয়েছেন ! তিনটে কেন যদি পাঁচটি কমিটির প্রয়োজন পড়ে পাঁচটি হবে । পিছিয়ে পড়া সমাজে মানুষের জন্য 1932 সাল থেকে মতুয়া মহাসংঘ কাজ করে আসছে । আগামীতেও কাজ করে যাবে । প্রয়োজনে মতুয়া মহাসংঘ তৈরি হয়েছে ।” বিজেপি বিধায়ক আরও বলেন, “যে মতুয়া মহাসংঘ ছিল তা ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছিল না ।” ঠাকুরবাড়ির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল শান্তনু ঠাকুর ও সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে । সেই দূরত্ব থেকেই কি নতুন সংগঠন ? উত্তরে সুব্রত বলেন, “দুই ভাইয়ের মধ্যে দূরত্ব না, মতুয়া মহাসংঘের মধ্যে যতগুলি দালাল আছে তাদের নিয়ে অসুবিধা । সেটা আমি শোধরাতে পারলাম না তাই নতুন সংগঠন তৈরি করতে হল ।” এতদিন ভাই শান্তনুর ছত্রছায়ায় ছিলেন দাদা সুব্রত ৷ সমস্ত কাজ একসঙ্গে করলেও গত কয়েক বছরে শান্তনুর কর্তৃত্ব যথেষ্ট বেড়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের ৷ এবার সেই ছত্রছায়া থেকে বেড়িয়ে নতুন কমিটি গঠন করলেন দাদা ৷ এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর বলেন, “ঠাকুরবাড়িতে আমরা যারা আছি সকলের ব্যক্তিগত সংগঠন করার অধিকার রয়েছে । সংগঠন করে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হয় । এই নিয়ে কোনও বিতর্ক আমি করব না । আমি চাই না তিনি বঞ্চিত হোন । আমি চাই সংগঠনটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুক ৷” তবে সুব্রত ঠাকুরের নতুন সংগঠন করার পিছনে দুই ভাইয়ের ভাগ বাটোয়ারার কারণ দেখছেন মমতাবালা ঠাকুরের নেতৃত্বধীন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী । তাঁর কথায়, “পরিবার বড় হয়েছে সংগঠন ভাগ হয়েছে এতে কিছু করার নেই । কিন্তু, এক থাকতে পারলে ভালো হত ।” তিনি আরও বলেন, “ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত । কার হাতে ঠাকুরবাড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকবে ? বিজেপির কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে ? তা নিয়ে দুই ভাইয়ের লড়াই । তবে আসল বিষয় হল, যে সংগঠন তাদের জন্য কাজ করবে মতুয়ারা তাঁর সঙ্গে থাকবে ।”