কলকাতা

থেমে থাকলে চলবে না, চাই গ্রাম বাংলার জাগরণঃ মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতাঃ পঞ্চায়েত নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর পাশাপাশি এবার যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাস্ককে জীবনের সঙ্গী করে নিন। করোনা থাকবেই। তার মধ্যে চাই গ্রাম বাংলার জাগরণ। গ্রামের জাগরণ এটাই আগামী দিনের মডেল। করোনাকে অযথা ভয় পাবেন না। তিনি বলেন, আমরা চাইছি আরও দোকান খুলুক। তবে জনবহুল এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। বাইরের জিনিসে হাত দেওয়ার আগে গ্লাভস পরে নেওয়াটা জরুরি। আজ নবান্নে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা সংকটের মধ্যেই রাজ্যের কৃষকদের উন্নয়নের স্বার্থে একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। নতুন এই প্রকল্পের নাম ‘মাটির সৃষ্টি’। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি এও বলেন, “দুরন্ত বৈপ্লবিক কর্মসূচি ঘোষণা করছি। জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের সঙ্গে বৈঠক করছি। ৫০ হাজার একর জমি এতে আসবে। আড়াই লাখের বেশি মানুষ এতে উপকৃত হবে। পরিবেশ বান্ধব প্রজেক্ট। নাম ‘মাটির সৃষ্টি’।’ শুধু তাই নয়, তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ৬ হাজার ৫০০ একর জমিতে প্রাথমিকস্তরে কাজ শুরুও হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমানে অনেক জমি পড়ে রয়েছে। সরকারের ও কৃষকেরও। মাটি খুব রুক্ষ বলে কৃষকরা কিছু করতে পারে না। এই মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ, পশু পালনের মতো কাজ চলবে। স্থানীয় চাষিদের ১০-২০ একর ও সরকারি জমি নিয়ে মাইক্রো প্ল্যান তৈরি করা হবে। সমবায় গড়া হবে, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হবে। কোনও ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে না। ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে কাজ করা হবে। জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দপ্তর এই বিভাগ হিসেবে এই প্রকল্প রূপায়ন করবে। সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ফান্ডিং করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলার সড়ক যোজনায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি বাংলার আবাস যোজনায় ১০ লক্ষ বাড়িও করা হবে। এ প্রসঙ্গে ম্যান পাওয়ার বাড়াবারও কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, পুজোর আগেই এ কাজ শেষ করতে হবে। যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা প্রয়োজনে ১২ ঘন্টার জায়গায় ১৪ ঘন্টা কাজ করবেন। এখন আরও বেশি করে মানুষকে কাজে লাগাতে হবে। অন্যদিকে, পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা ফিরছেন তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজে লাগানোর জন্য ডিএমদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা প্রসঙ্গে এদিন কনফারেন্সে তিনি জানান, গ্রিন জোনে টেস্ট বাড়াতেই হবে, শুধু রেড জোনে টেস্ট করতে হবে এটা ঠিক নয়। অন্যদিকে, বৈঠকে রেশন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেশন, পেনশন নিয়ে কোন অভিযোগ চাইনা। সামাজিক প্রকল্পের টাকাটা যেন বেনিফিশিয়ারি পায়, কোন দুর্নীতির অভিযোগ না আসে, তাহলে ছেড়ে কথা বলবো না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা আরও বলেন, রমজান মাস চলছে, কেউ কেউ আছে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করবে। দাঙ্গা যারা বাধাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ডিএমদের সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দিলেন তিনি। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ফেক নিউজ দেখিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে, তাদের উপর নজর রাখতে প্রত্যেকটি জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য –

🔵 বাংলার আবাস যোজনায় ১০ লাখ বাড়ি করা হবে গ্রামে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
🔵 গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য জেলাশাসকদের মাথা খাটাতে হবে। তাঁদের নতুন নতুন আইডিয়া দিতে। কারণ, প্রতিটি জেলার চরিত্র, সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যার বিস্তার আলাদা। সেই অনুযায়ী কীভাবে কোন কর্মসূচি নেওয়া যায় সে ব্যাপারে জেলাশাসকদের ভাবতে হবে। দরকার হলে তাঁদের ১২ ঘন্টার জায়গায় ১৪ ঘন্টা কাজ করতে হবে।
🔵 বাংলা সড়ক যোজনায় জোর দিতে হবে। পুজোর আগে রাস্তা মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে।
🔵 যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরছেন তাঁরা আপাতত কদিন বিশ্রাম নিন। তার পর তাঁদের একশ দিনের কাজ প্রকল্পে সুযোগ দেওয়া হবে। তবে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে স্থানীয় তথা বর্তমান শ্রমিক অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
🔵 একশ দিনের প্রকল্পে কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। যত বেশি সম্ভব কাজ দিতে হবে শ্রমিকদের।
🔵 মাস্ককে জীবনের সঙ্গী করে নিতে হবে। কারণ, করোনা থাকবে। তার মধ্যেই চাই গ্রাম বাংলার জনজাগরণ। আগামী দিনে আরও দোকানপাট খুলবে। তবে সামাজিক দূরত্ব যথাসম্ভব বজায় রেখে কাজকর্ম করে যেতে হবে।
🔵 সামাজিক প্রকল্প খাতে সমস্ত উপভোক্তারা যাতে ঠিক সময়ে টাকা পান তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন অন্যায় সুযোগ না নিতে পারে তা দেখতে হবে। অর্থাৎ উপভোক্তাদের কেউ যেন ঠকাতে না পারে দেখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে।
🔵 রেশন ব্যবস্থায় যাতে কোনও অনিয়ম না হয়, কেউ যেন খাবারের মজুতদারি না করতে পারে তা দেখতে হবে।
🔵 পড়ে থাকা জমি কাজে লাগাতে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প।
🔵 ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হতে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।