দেশ

‘নামে যোগী হলেও আসলে উনি ভোগী, উনি গরীবদের কী দেবেন? ওঁকে একটা ভোটও নয়!’ উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের ডাক মমতার

অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীদের সমর্থনে বারাণসীতে প্রচারে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই গতকালের প্রসঙ্গ টানেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময়ই বিজেপি কিছু কর্মী আমাকে কালো পতাকা দেখিয়েছিল, গাড়িতে ডান্ডা মারল। তখনই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াই। ভাবলাম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি হেরে গিয়েছে। এরপর গঙ্গার ঘাটে গিয়েও একইকাণ্ড করেছে। আমি বলি হর হর মহাদেব।’ এরপরই হুঁশিয়ারির সুরে মমতার বলেন, ‘আমি ভীতু নই, আমি লড়াকু। আমার দলের এখানে সংগঠন নেই। তবু শুধু আমাকে দেখেই ওরা ভয় পেয়ে গেল। তাই শুধু এবার নয়, সব পর্যায়ের ভোটের আগে প্রয়োজনে প্রচারে আসব। ‘ এদিন যে সভা তিনি করলেন সেই সভা কার্যত ভিড়ে ছয়লাপ ছিল আগে থেকেই। এদিনের সভায় প্রধান আকর্ষণ ও বক্তা ছিলেন তিনিই। সেই কারণে অখিলেশ নিজেও এদিন সেভাবে বেশি কথা বলেননি। ‘দিদি’ মমতাকে ছেড়ে দিয়েছেন মঞ্চ। আর সেই মঞ্চ থেকেই বাংলার অগ্নিকন্যা একের পর এক অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে। তাঁর ভাষণে যত আগুন ঝরেছে বারাণসীর জনতা ততই গলা মিলিয়ে তাঁর সঙ্গে সায় দিয়েছেন। সেই সভা থেকেই মমতার কটাক্ষ , ‘নামে যোগী হলেও আসলে উনি ভোগী। উনি গরীবদের কী দেবেন?, ওঁকে ভোট নয়।’ গত বছর একাধিকবার দেখা গিয়েছে যোগী প্রশাসন নিজেদের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের করা একের পর এক কাজ তুলে ধরেছেন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের করা কাজ বলে। কিন্তু তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যেতেই সেই সব বিজ্ঞাপন সরে যেতে বেশি সময় লাগেনি। সেই প্রসঙ্গে না গিয়েও মমতা এদিন যেভাবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে আক্রমণ করেছেন তা কার্যত যোগীর

রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এদিনের সভা থেকে যোগীকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যোগী নিজেকে সাধু বলেন কিন্তু যোগী সাধু নন। কেউ নিজেকে সাধু বললেই সাধু হয়ে যান না। নামে যোগী কাজে ভোগী। ওকে ভোট নয়। যোগীকে ভোট দিলে কিছু হবে না খালি গুণ্ডারাজ বাড়বে। বাংলায় আমরা বহু সামাজিক প্রকল্প করেছি। উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে যোগী কিছুই করেনি। যোগী আদিত্যনাথ যোগী নন ভোগী। উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার বদলে দিন। উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে বাইরে কেন কাজের খোঁজে যেতে হয়? যোগী ক্ষমতায় ফিরলে বার বার উন্নাও আর লখিমপুরের মতো ঘটনা ঘটবে। উন্নাও না চাইলে বিজেপিকে হটান, যোগীকে হটান। নামেই সাধু, উনি সাধুদের নামও খারাপ করছেন। যোগী আসলে ভোগী। উনি গরীবদের কী দেবেন? আমার অনুরোধ যদি গঠবন্ধনকে জেতাতে চাও তাহলে আবার একবার ধাক্কা দাও।’ একই সঙ্গে মমতা এদিনের সভা থেকে আক্রমণ শানিয়েছেন যোগীর বিজেপিকেও। বলেছেন, ‘কৃষক শ্রমিক কারোর জন্যই কিছু করে না বিজেপি। কৃষকদের মর্যাদা দিতে জানে না। লখিমপুরে কৃষকদের গাড়িতে পিষে মারল। এখন তো মা-বোনকেও অস্মমান করছে বিজেপি। অ্যান্টি রোমিও স্ক্যোয়াডের নামে যা করছে তা মা বোনদের অপমান। গঙ্গাকেও দূষিত করেছে বিজেপি। কোভিডে মৃতদের দেহ সৎকার না করে গঙ্গায় ভাসিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সরকার। বাংলার সরকার তাদের উদ্ধার করে অন্তিমসংস্কার করেছে। ওরা আপনাদের আত্মীয়দের মৃতদেহ গঙ্গায় নিক্ষেপ করেছে, আপনারা ওদের উত্তরপ্রদেশের বাইরে নিক্ষেপ করুন। বিজেপিকে এক ধাক্কা দিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে বের করে দিন। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি যে পাপ করেছে, তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। সেই অন্ধকার সরিয়ে নতুন আলো আনতে হবে। তবে মনে রাখবেন খেলা এত সহজ নয়। তবে আপনারা পারবেন। আপনারা উপযুক্ত জবাব দেবেন।’ উত্তরপ্রদেশের মাটিকতে দাঁড়িয়েও একুশের ভোটে বাংলার জনপ্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’র ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, ‘খেলা এত সহজ নয়। তবে আপনারা পারবেন। আপনারা উপযুক্ত জবাব দেবেন। ‘ সবশেষে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে বিজেপি যে পাপ করেছে, তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তবে সেই অন্ধকার সরিয়ে নতুন আলো আসবে।’