মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমে অমৃতস্নান করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে বহু পুণ্যার্থীর ৷ বাংলা থেকে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে । বড়দিদি পুষ্পা সাহার সঙ্গে কুম্ভে পুণ্য সঞ্চয় করতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে কলকাতার রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দারের (৬৩)। মৃত্যু হয়েছে শালবনির বাসিন্দা ৭৮ বছরের ঊর্মিলা ভুঁইয়ার । বাসন্তী পোদ্দারের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ৭২ এ অশ্বিনী নগরের বাড়ি থেকে পুণ্যস্নানের জন্য মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন তিনি । দিদি ও তাঁর দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে প্রায়াগরাজে গিয়েছিলেন বাসন্তী পোদ্দার । তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলেমেয়েও ছিল । বুধবার ত্রিবেণী সঙ্গমের ঘটনায় আচমকা হুড়োহুড়িতে তিনি ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যান । তারপরে আর উঠতে পারেননি । পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁরা ৷ এই খবর আসার পর থেকেই ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার । প্রয়াগরাজে থাকা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে । দ্রুত বৃদ্ধার দেহ ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ অশ্বিনী নগরের বাসিন্দার মৃত্যু প্রসঙ্গে নগরপাল মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, “পুলিশের একটি টিম ইতিমধ্যে ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে গিয়েছে এবং পরিজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে । এক্ষেত্রে যা করণীয় তা করা হবে ।” একইভাবে মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নান করতে পরিবারের সঙ্গে প্রয়াগরাজে গিয়েছিলেন শালবনির বাসিন্দা ঊর্মিলা ভুঁইয়া । ঘটনার দিন হুড়োহুড়িতে পরিবারের সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন ৷ এর পর থেকে 78-এর বৃদ্ধার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না । পরবর্তীতে তাঁদেরই এক আত্মীয় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতালে গিয়ে উর্মিলা ভুঁইয়ার মৃতদেহ শনাক্ত করেন । তাঁর দেহ খড়গপুরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে । তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে নবান্নের আধিকারিকদের কথা হয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেহ সরাসরি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে । গত সোমবার বিকেলে খড়গপুর স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দেন ওই বৃদ্ধা ৷ সঙ্গে ছিলেন খড়গপুরের কৌশল্যার বাসিন্দা জামাই কমল মাইতি । ছিলেন কমলের স্ত্রী ও মা-সহ মোট সাত জন । মঙ্গলবারই প্রয়াগরাজে পৌঁছে যান তাঁরা । বুধবার ভোরের ঘটনায় ভিড়ের মাঝে পড়ে যান বৃদ্ধা । আর তার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর । এছাড়াও মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ বাংলা থেকে সেখানে যাওয়া আর এক পুণ্যার্থী ৷ কাঁথির জুনপুটের বাসিন্দা প্রণবকুমার জানার খোঁজ মিলছে না । জানা গিয়েছে, যে সঙ্গীদের সঙ্গে তিনি পুণ্যস্নানে গিয়েছিলেন, তাঁরা জানিয়েছেন স্নান করতে নামার পর থেকেই নিখোঁজ প্রণবকুমার জানা । পরিচিতরা গোটা মেলা প্রাঙ্গণে খোঁজ করার পরেও এই বৃদ্ধের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । স্থানীয় প্রশাসন ও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া হওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ । তাঁর ছেলে ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন । তাঁর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নিখোঁজ এই বৃদ্ধের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে । এদিকে, মহাকুম্ভের ঘটনায় নিখোঁজ মালদা শহরের এক প্রৌঢ়া । দলের বাকিদের খোঁজ মিললেও এখনও তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ নিখোঁজ প্রৌঢ়ার নাম অনিতা ঘোষ । বয়স 60 বছর । বাড়ি মালদা শহরের উত্তর কৃষ্ণপল্লি ভাঙাপাড়া এলাকায় । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার তিনি আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা দেন । মঙ্গলবার রাতে তাঁরা সেখানে পৌঁছন । ভোর রাতে হঠাৎ একটা ব্যারিকেড ভেঙে লোক ঢুকতে শুরু করে । চাপাচাপিতে দলের সকলের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ৷ ঘটনার পর বাকিদের খোঁজ মিললেও এখনও খোঁজ মেলেনি অনিতা ঘোষের ।
