জাতীয় রাজনীতিতে নীতীশ কুমারকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। কিন্তু ‘ডিগবাজি’র থেকেও দিল্লির দরবারে বড় হয়ে গিয়েছে আর একটি বিস্ফোরক অভিযোগ। আর তা হল, মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র যাবতীয় রণকৌশল অক্টোবর মাস থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাচার করে যাচ্ছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এবং গোটাটাই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ‘প্ল্যানে’র অঙ্গ। বৈঠকে যা হবে, জোটের সিদ্ধান্ত, কিংবা পরবর্তী কর্মসূচি… সব খবর পৌঁছে দিতে হবে বিজেপির শীর্ষস্তরে। জানা যাচ্ছে, শুধু বৈঠক নয়, ফোনেও ‘ইন্ডিয়া’র যা যা রণকৌশল স্থির হয়েছে, সেটাও জেনে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। রবিবারই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, ‘বিজেপির সঙ্গে প্ল্যান করেই ইন্ডিয়াকে ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন নীতীশ কুমার। এটা এক-দু’দিনের ব্যাপার নয়।’ এর পাল্টা দাবি অবশ্য জেডিইউয়ের পক্ষ থেকেও এসেছে। কে সি ত্যাগীর বক্তব্য, ‘সবটাই পরিকল্পিত হলে আমরা পাটনায় কেন বিরোধী জোটের বৈঠকের মূল উদ্যোক্তা হয়েছিলাম? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও তো নীতীশ কুমারই জোটে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।’ ত্যাগীর এই মন্তব্য ইন্ডিয়ার শরিকদের ক্ষোভ যে আরও বাড়াবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে এবং আরজেডি আগেই কিন্তু নীতীশের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সে ব্যাপারে কংগ্রেসকে সতর্কও করা হয়েছিল। যদিও রাহুল গান্ধীরা তাতে গা করেননি। এখন বিজেপির সূত্র থেকেই তার সত্যতার ইঙ্গিত মিলছে। জানা যাচ্ছে, এনডিএতে ফেরার নিয়মিত আলোচনা চলছিল অক্টোবর থেকে। বলা হয়েছিল, ইন্ডিয়ার আসন সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে, গোটা দেশে কতগুলো আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পর নীতীশ কুমারের পরিকল্পনা আরও সহজ হয়ে যায়। জোট শরিকদের তিনি বোঝাতে থাকেন, কংগ্রেস দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে রাহুল গান্ধীদের হাত ধরে থাকা মানে জোট শরিকদেরও আসন হারানো। সেই প্রতিফলন এখনও পাওয়া যাচ্ছে ত্যাগীর মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে অচ্ছুৎ। ওদের সঙ্গে থাকলে অন্য দলেরও ভরাডুবি হবে। কংগ্রেসই আমাদের দল ভাঙার খেলায় নেমেছিল। আর খাড়্গে প্রধানমন্ত্রী মুখ? মানতে পারছি না।’ তবে ইন্ডিয়া জোটের চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েই দিয়েছেন নীতীশ। তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার থেকেও বাড়তি সঙ্কট হল, এতদিন ধরে যা যা রণকৌশল হয়েছে, তার সবই বিজেপির শীর্ষ নেতারা জেনে গিয়েছেন। সুতরাং সেই কৌশল আর কার্যকর করা যাবে না। সংশয় তৈরি হয়েছে অভিন্ন কর্মসূচি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েও। সেটাও কি নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপিকে? জল্পনা অবশ্য আরও আছে। কারণ বিজেপি সূত্রের খবর, এটাই নীতীশ কুমারের শেষ টার্ম। ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপি থেকে। এই ডিলে নীতীশকে রাজি হতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্রাট চৌধুরীই বিজেপি হাইকমান্ডের পছন্দের। তাঁকে উপ মুখমন্ত্রী করে চাপে রেখে দিল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। নীতীশ কুর্মি সম্প্রদায়ের। আর সম্রাট চৌধুরী কৈরি। তাই অনগ্রসর বর্গের কাছে বিজেপি আগাম বার্তা দিয়ে রাখল যে, ভবিষ্যতে আপনাদের প্রতিনিধিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। অতএব এক বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার পর রাজ্যপাল হয়েই হয়তো রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করবেন নীতীশ।