জেলা

এক টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না-কাটতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ ৷ একটানা ভারী বৃষ্টি, ধসে নাগরাকাটা, মিরিক, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারের একাধিক এলাকা জলের তলায় । জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে একাধিক বাড়ি, মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের ৷ এই আবহে মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাশাপাশি, পরিবারের একজনকে হোম গার্ডের চাকরি দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ।বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বিমানে ওঠার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি ৷ উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই বিপর্যয়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে ১৮ জন দার্জিলিং, মিরিক ও কালিম্পং জেলার এবং ৫ জন নাগরাকাটার বাসিন্দা । প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ পাশাপাশি পরিবারের একজনকে হোম গার্ডের চাকরি দেওয়া হবে । জানি, জীবনের বিকল্প কিছু নেই ৷ কিন্তু, অন্তত পরিবারগুলির পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব ৷” এদিন প্রশাসনিক তৎপরতা, সিকিমের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে একের পর এক মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “দুর্গাপুজো আমাদের খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে ৷ পুলিশ, প্রশাসন, ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলি সবাই অসাধারণ ভূমিকা নিয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আজ লক্ষ্মীপুজোর দিন, কিন্তু আমাকে যেতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গে । পরিস্থিতি খুবই কঠিন ।”তিনি আরও বলেন, “গত পরশুদিন থেকেই মুখ্যসচিব, ডিজিপি ও আমি নিজে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি । উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে । সেই সঙ্গে, সিকিম ও ভূটান থেকে নেমে আসা জল মিলে সম্পূর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে । আজ গঙ্গার পাশ দিয়ে আসতে আসতে দেখলাম, গঙ্গা এখন প্রায় উপচে পড়ছে । সামনে হাই টাইড আছে, তাই পরিস্থিতি আরও জটিল হবে ।”ডিভিসি ও কেন্দ্রের ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেন মমতা । তাঁর বক্তব্য, “ডিভিসি ইচ্ছে মতো জল ছাড়ছে । ঝাড়খণ্ডকে বাঁচিয়ে আমাদের দিকে সমস্ত জল ছেড়ে দিচ্ছে । আমি বহুবার বলেছি, মাইথন, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে পলি তুলুন । কুড়ি বছর ধরে বলছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না । জল ধরার ক্ষমতা এখন শূন্যের কাছাকাছি । এর চেয়ে ড্যাম না থাকলেই ভালো ছিল, তাহলে জল নিজের প্রাকৃতিক পথে বেরিয়ে যেতে পারত । এখন দক্ষিণবঙ্গের উপরেই চাপ পড়ছে ।”এদিন সিকিমের জলবিদ্যুৎ নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “ড্যাম থেকে কি লাভ হল ! সিকিমে ১৪টা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে, তিস্তার উপরে । জল ধারণ করবে কোথায়? সবটাই শিলিগুড়িতে এসে পড়ছে । শুধু আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ সিকিমের মানুষের টাকা নিয়ে শিলিগুড়িতে এসে ব্যবসা করছে, খবর আমরা রাখি ।” এরপর তিনি আরও বলেন, “ওরা তো ৯০ শতাংশ সাবসিডি পায় । সিকিমকে অষ্টম তপশিলে যুক্ত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস, তখন অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । বেঙ্গল প্যাকেজ করা হয়েছিল তখনই । কিন্তু, আজ সেই সুবিধা মানুষ পাচ্ছে না । পর্যটনের টাকা মানুষের কাজে না লেগে শিলিগুড়িতে ব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে ৷ আর দার্জিলিংকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে । আমি যেমন পাহাড়কে ভালোবাসি, তেমনি সমতলকেও ভালোবাসি । আমি কয়েকদিন আগেই পাহাড় থেকে ফিরেছি, আর আজ লক্ষ্মীপুজোর দিনেই যেতে হচ্ছে, কারণ মানুষ বিপদে পড়লে পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব ।” উত্তরবঙ্গে বিপর্যস্ত এলাকাগুলির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নাগরাকাটা, জোরবাংলো, মিরিক ও কালিম্পংয়ের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে । ভূটান সরকার আমাদের চিঠি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে । আমরা অনুরোধ করেছিলাম ধীরে ধীরে জল ছাড়তে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি । তবু রাজ্য প্রশাসন দিনরাত কাজ করছে ।” তিনি জানান ইতিমধ্যেই সেনা, পুলিশ ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সহযোগিতায় ব্যাপক উদ্ধার অভিযান চলছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রায় ৫০০ জন পর্যটককে আমরা উদ্ধার করেছি । ইতিমধ্যেই ৪৫টি ভলভো বাসে বহু পর্যটককে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে । ২৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আজ আরও ৫০০ জনকে নিয়ে আসা হবে । হোটেলগুলিকে বলা হয়েছে, কোনও পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেবেন না ৷ প্রয়োজনে সরকারই দেবে । সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না-করা পর্যন্ত, কাউকে হোটেল ছাড়তে বলা যাবে না ৷” সেই সঙ্গে তিনি জানান, পুলিশ ইতিমধ্যেই নাগরাকাটা ও মিরিকে কমিউনিটি কিচেন চালু করেছে ৷