শনিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করে কলকাতার একাধিক পুজোমণ্ডপের উদ্বোধনে সামিল হলেন তিনি ৷ হাতিবাগান সর্বজনীন, উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যয় থেকে শুরু করে লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব- প্রতিটি জায়গায়ই ভিড় জমেছিল উপচে পড়া ৷ তবে, শুধু প্রদীপ প্রজ্জ্বলন বা প্যান্ডেল ঘোরা নয় ৷ মমতার বক্তব্যের মধ্যেও উঠে এল পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার বার্তা ৷ প্রথমেই হাতিবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপে যান মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই পুজোর সঙ্গে বহুদিন ধরেই কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ যুক্ত ৷ উদ্বোধনের পর মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা জানান, মহালয়ার আগে তিনি কখনোই মাতৃমূর্তির উদ্বোধন করেন না ৷ শুধু মণ্ডপের উদ্বোধনেই যোগ দেবেন ৷ এরপরই তিনি যান টালা প্রত্যয়ের পুজোয় ৷ সেখানে একঝলক দেখা পাওয়ার জন্য ভিজে বৃষ্টিতে হাজির ছিলেন হাজারো মানুষ ৷ তাঁদের উদ্দেশে মমতার পরামর্শ, “যখন-তখন বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সকলে ছাতা সঙ্গে রাখুন ৷ বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়লে, পুজোর আনন্দই মাটি হবে ৷” সেই সঙ্গে প্রার্থনা করেন, “পুজোর দিনগুলো যেন আনন্দে কাটে ৷ মা দুর্গা আবহাওয়াকে সুস্থ করে দিন ৷” দিনের শেষে মমতা পৌঁছন শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের মণ্ডপে, যেটি রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর উদ্যোগে গড়ে ওঠে। এই মণ্ডপের ভিড় প্রতি বছরই শিরোনামে থাকে। ভিআইপি রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়, যানজটের শিকার হন সাধারণ মানুষ। এদিনও মঞ্চ থেকে দমকলমন্ত্রীকে সরাসরি নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, “ভিড় যেন রাস্তায় সমস্যার সৃষ্টি না-করে ৷ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে না-হয় তা দেখতে হবে ৷” দলনেত্রীর বার্তার সঙ্গে সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন সুজিত বসু ৷ তবে, তা তিনি বা তাঁর পুজো কমিটি কতটা পালন করবেন, সেটা সময়ই বলবে ৷ তবে, শ্রীভূমির অনুষ্ঠানে এসে মমতা শুধু ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়েই কথা বলেননি ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপরে হওয়া নির্যাতনের অভিযোগের বিরুদ্ধেও সরব হলেন ৷ মমতা বলেন, “আমি সব ভাষাকে সম্মান করি ৷ প্রত্যেকের মাতৃভাষার প্রতি আলাদা টান থাকে ৷ কিন্তু, বাংলায় কথা বললেই অত্যাচার, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না ৷” পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “বাংলা থেকে প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করেন ৷ তাঁরা দক্ষ বলেই তাঁদের কাজে নেওয়া হয় ৷ আবার বাংলাতেই দেড় কোটি অবাঙালি বহু বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করছেন ৷ তাঁদের কখনও হেনস্থা করা হয়নি ৷ সেটাই হওয়া উচিত ৷” এদিন পুজো উদ্বোধনের পাশাপাশি রাজ্যবাসীকে আগাম শারদিয়ার শুভেচ্ছাও জানান মমতা ৷ তাঁর বক্তব্য, “পুজোর দিনগুলো আনন্দে কাটুক, সকলে সুস্থ থাকুন ৷” মঞ্চে উপস্থিত শিল্পী নচিকেতা ও অন্যদের উদ্দেশে রসিকতা করে তিনি বলেন, “তোমরা যতই চণ্ডীপাঠ করো না-কেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মতো হবে না ৷” সেইসঙ্গে নিজের ছোটবেলার মহালয়ার ভোরে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ শোনার স্মৃতিচারণও করেন মমতা ৷


