দেশ

পিএমও অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সেজে কাশ্মীর সীমান্তে রেকি, ইন্টেলিজেন্স বিভাগের জালে গুজরাতের বাসিন্দা

স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির রাজ্যের বাসিন্দা। তায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের (পিএমও) অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ক্যাম্পেনস)! শুনেই গলে গিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন, এমনকী সেনাবাহিনী পর্যন্ত। জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা বলয় বরাদ্দ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে। আর থাকার জন্য পাঁচতারা হোটেল। বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে সেনাও পাহারা দিতে শুরু করে পিএমও কর্তাকে। সেনা-পুলিশ-আধা সামরিক বাহিনীর কনভয় নিয়ে সরকারি খরচে মাসচারেক ধরে কাশ্মীর সীমান্ত ‘রেকি’ চালাচ্ছিলেন কিরণভাই প্যাটেল। এমনকী সীমান্তের সেনা শিবিরে পর্যন্ত ছিল তাঁর অবাধ গতিবিধি। কিন্তু যে পরিচয়ের দৌলতে এত কিছু, সেটাই ছিল ভুয়ো। কারও এতটুকু সন্দেহ হয়নি। শেষপর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ ধরে ফেলে গুজরাতের আমেদাবাদ শহরের বাসিন্দার জালিয়াতি। গত ২ মার্চ শ্রীনগরের এক হোটেল থেকে প্রতারক কিরণভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টির সঙ্গে পিএমও জড়িত থাকায় এই খবর প্রকাশ করেনি পুলিশ। অবশেষে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়। শুক্রবার কিরণভাইকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কাশ্মীরের এক আদালত। ধৃতের নামে গুজরাতেও ৩টি মামলা দায়ের রয়েছে বলে খবর। ওই প্রতারকের তিন সহযোগী অবশ্য শ্রীনগর ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে। তাদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।  
পরনে দামি পোশাক, চোখে কালো সানগ্লাস—বরফঘেরা সীমান্তে দাঁড়িয়ে কিরণভাইয়ের কোমরে হাত দিয়ে সেনা জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়ার ভিডিও বা ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। টুইটারে ওই ব্যক্তির অজস্র ফলোয়ার রয়েছে। সেই তালিকার অন্যতম বিজেপির গুজরাত শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপসিং বাঘেলা। তাঁদের মধ্যে কী সম্পর্ক, সেটা নিয়েই এখন চর্চা তুঙ্গে। কিরণভাই যে গুজরাতের বাসিন্দা, তা নিশ্চিত করেছে পুলিস। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, ধৃতের পলাতক তিন সহযোগীর নাম অমিত হিতেশ পান্ডিয়া, জয় সীতাপাড়া এবং ত্রিলোক সিং। অমিত এবং জয়ের বাড়িও গুজরাতে। ত্রিলোকের রাজস্থানে। গত চারমাসে এরা বেশ কয়েকবার কাশ্মীরে এসেছে। শ্রীনগরে গিয়ে পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। তবে কিরণকে নজরে রেখেছিল ইন্টেলিজেন্স বিভাগ। শেষবার তিনি শ্রীনগরে আসতেই পুলিসকে সতর্ক করা হয়। কোনও সাধারণ অফিসার নয়, একেবারে পিএমও’র ডিরেক্টর পরিচয় দিয়ে কীভাবে একজন এতদিন ধরে সরকারি সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছিলেন, সেটাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তদন্তকারীদের। এর পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক নেতা জড়িত? শুরু হয়েছে জল্পনা। সূত্রের খবর, সঠিক সময়ে কিরণকে চিহ্নিত করতে না পারার দায়ে দুই পুলিসকর্মীকে সাসপেন্ড করেছে প্রশাসন।