কলকাতা ক্রাইম ভাইরাল

৫ জুনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন ময়নাতদন্তের সময়, পোস্টমর্টেমে ‘সন্তুষ্ট’ হয়েও আন্দোলন! নথি প্রকাশ্যে

বারবারই অভিযোগ উঠছিল ময়নাতদন্ত নিয়ম মেনে হয়নি। সূর্যাস্তের পর ময়নাতদন্ত হয়েছিল। নমুনা সংগ্রহও ঠিকমতো হয়নি। ইচ্ছা করে নমুনা সংগ্রহে গণ্ডগোল করা হয়েছিল। পেলভিক বোনও ভাঙা ছিল অভয়ার। রিপোর্ট ট্যাম্পার বা বিকৃত করা হয়েছে।-উঠতে থাকে এইসব অভিযোগ। সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে শত শত চিকিৎসক বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন এইসব নিয়ে। ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ এবং গণধর্ষণ তত্ত্বকে এক করে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আয়োজিত জুনিয়র ডাক্তারদের কনভেনশনে। অথচ, ময়নাতদন্তে যাতে সব নিয়ম মতো হয় এবং এসওপি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারটিং প্রসিডিওর বজায় থাকে, সেজন্য ৯ আগস্ট একটি টিম গঠন করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ঠিক হয়েছিল, সেই টিমের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন ময়নাতদন্তের সময়। কোনওরকমের গণ্ডগোল চোখে পড়লেই যাতে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারেন। সেইমতো পাঁচজন জুনিয়র ডাক্তার অংশ উপস্থিত ছিলেন অভয়ার ময়নাতদন্তের সময়। তাঁদের হাজির থাকার কথা স্বীকার এবং ময়নাতদন্তে ‘সন্তোষ’ জানিয়ে সই করা জুনিয়র ডাক্তারদের সেই নথিই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। আর জি কর কাণ্ডে নাগরিক সমাজ যখন পড়ুয়াদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে পথে নেমেছে, তখনই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এই ঘটনাক্রম নিয়ে। নজর করার মতো বিষয় হল, ময়নাতদন্ত চলাকালীন নিজেদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে যে নথিতে নাম লিখে জুনিয়র ডাক্তাররা সই করেছেন, তা নিয়ে আন্দোলনে কোনও উচ্চবাচ্যই নেই! শুধু তাই নয়, পাঁচ জুনিয়র ডাক্তার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন, তাঁরা ময়াতদন্ত নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’। সেখানে তাঁদের সইও রয়েছে। কী লেখা ছিল সেই নোটে? ‘উই ওয়্যার প্রেজেন্ট ডিউরিং অটপ্সি’ এবং ‘উই আর স্যাটিসফায়েড।’ মানে লিখিতভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ময়নাতদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন এবং ময়নাতদন্ত নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তাররা ময়নাতদন্তে ‘গাফিলতি’র অভিযোগও করে গিয়েছেন! এই পাঁচজন প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তারের (তিতাস, নম্রতা, রিয়া, রমা, মৌতৃষা) মধ্যে তিনজনের নাম আবার দেখা গেল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের কমিটিতেও। গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, তাঁদের তরফ থেকে এই ধরনের প্রচারে বারণ তো দূরঅস্ত, প্রতিবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। ঠিক যেমনটা ফাঁস হয়েছিল সেমিনার রুমের পাশের ঘর ভাঙা নিয়ে। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চললেও জুনিয়র ডাক্তাররা কিন্তু একবারও বলেননি, মেরামতির ওই কাজ শুরুর আগে যৌথ পরিদর্শনের রিপোর্টে সই করেছিলেন তাঁরাও। কেন এমন হল? আপনারা কি ময়নাতদন্ত নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন? জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্টের সামনের সারির নেতারা ফোনে সাড়া দেননি। প্রশ্ন করা হয়েছিল ময়নাতদন্তে উপস্থিত ওই পাঁচ জুনিয়র ডাক্তারের অন্যতম ডাঃ রমা বেরাকেও? তিনি জানিয়েছেন, ‘বিচারাধীন বিষয়।’ তাই এ‌ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তাই প্রশ্ন থাকছেই। যে অভয়ার ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে আন্দোলনকারীরা পথে নেমেছিলেন, ঘটনার দিন তাঁদের ভূমিকা উল্টো ছিল কেন? আর যদি ময়নাতদন্তে তাঁদের গলদ নজরে এসেই থাকে, নথিতে সই তাঁরা কেন করলেন? সই করতে যদি তাঁদের বাধ্য করা হয়ে থাকে, আন্দোলনের সময় তার পর্দাফাঁস তাঁরা করেননি কেন?