জেলা

১ লক্ষ টাকার সুপারি, জয়নগরে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি খুনের নেপথ্যে সিপিএম নেতা আনিসুর!

মাত্র এক লক্ষ টাকার ‘সুপারি’! আর তার বিনিময়েই প্রাণ গিয়েছে জয়নগরের বামুনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সাইফুদ্দিন লস্করের। হামলার আগে ৪ দিন ধরে রেইকি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিস কার্যত নিশ্চিত— ‘সুপারি’ দেওয়ার নেপথ্য কারিগর দলুয়াখাকি গ্রামের সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান লস্কর। একসময় সাইফুদ্দিন এবং আনিসুর দু’জনেই লাল পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালে সাইফুদ্দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। সম্প্রতি এলাকায় একটি দোকান বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে দূরত্ব বদলে যায় শত্রুতায়। খুনের নেপথ্যে সেটি অন্যতম কারণ কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সোমবার কাকভোরে ওই খুনের ঘটনার পর থেকেই আনিসুর বেপাত্তা। তিনটি পৃথক টিম গড়ে তাঁর খোঁজ শুরু করেছে পুলিস।  সাইফুদ্দিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই ধাওয়া করে দুই আততায়ীকে ধরে ফেলেছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাদেরই একজন সাহাবুদ্দিন শেখ। ধরা পড়ার পর সে জানিয়েছিল, আনিসুরের নির্দেশেই তার এখানে আসা। গণপিটুনির চোটে মৃত্যু হয়েছে সাহাবুদ্দিনের। জনতার হেফাজত থেকে জখম অবস্থায় শাহারুল নামে অপর এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ধৃত আততায়ী জেরায় জানিয়েছে, দলুয়াখাকির নাসির এবং মন্দিরবাজারের টেকপাঁজার বড়ভাই নামে দু’জন তাকে ১ লক্ষ টাকার লোভ দেখিয়ে এখানে এনেছিল। সেটাও একটা বড় চুরি সারার টোপ দিয়ে। তার আগে সংশ্লিষ্ট বাড়িতে নজরদারি চালাতেও বলা হয়। তবে সে কাউকে মারেনি। ওয়ান শাটারের সাহায্যে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সাইফুদ্দিনকে গুলি করেছে সাহাবুদ্দিন। সেই সময়ও ঘটনাস্থলে হাজির ছিল নাসির আর বড়ভাই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই নাসির হল সিপিএম নেতা আনিসুরের ভাই। টেকপাঁজার বড়ভাইয়ের খোঁজও শুরু হয়েছে। পুলিসের দাবি, সেদিন সাইফুদ্দিনকে খুন করতে দু’টি মোটর সাইকেলে চেপে মরিশ্বর বাঙাল বুড়ি মোড়ে এসেছিল পাঁচ দুষ্কৃতী। তার মধ্যে একটিতে ছিল সাহাবুদ্দিন এবং শাহারুল। অপরটিতে যে নাসির এবং বড়ভাই ছিল, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত পুলিস। কিন্তু পঞ্চম ব্যক্তিটি কে? তা জানতে শাহারুলকে বিশদে জেরা করা হচ্ছে। তবে খুন সংক্রান্ত বিষয়ে ধৃতের দাবির সঙ্গে সহমত নন তদন্তকারীরা। ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলার রেকর্ডে ‘হিস্ট্রি শিটার’ বলে পরিচিত সে। দর্জির কাজ করলেও, অপরাধ জগতে তার ভালো আনাগোনা। চুরি-ছিনতাইয়ের বিস্তর অভিযোগের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গুলি চালনার মামলাও রয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, সাইফুদ্দিন খুনের দু’দিন আগেও এক ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে মোবাইলে বেশ কয়েকবার কথা বলেছে শাহারুল। সেই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই ঘটনার নেপথ্যে লালপার্টির মাতব্বরদের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিন লস্কর খুনের ছক বেশ কিছুদিন আগেই কষা হয়েছিল, তা নিয়ে নিঃসন্দেহ তদন্তকারীরা। অফিসারদের মতে, পরিকল্পনামাফিক সাইফুদ্দিনের বাড়ির কাছেই একটি ডেরায় রাখা হয়েছিল ‘ভাড়াটে আততায়ী’ শাহারুলকে। গত চারদিন ধরে সে নজরদারি চালাচ্ছিল তৃণমূল নেতার উপর। ভোরে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় সাইফুদ্দিন যে কার্যত একলা থাকেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই অপারেশনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।
খুনের ঘটনার পর দলুয়াখাকি গ্রামে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এদিন সেখানে যান সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-সুজন চক্রবর্তীরা। রাস্তায় পুলিস তাঁদের বাধা দিলে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। দলুয়াখাকি যাওয়ার পথে ঢোসার কাছে আটকে দেওয়া হয় আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকিকেও।